জানুন কিসমিস খাওয়ার ১০ উপকারিতা

হজমের উন্নতি থেকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো পর্যন্ত কিসমিসের রয়েছে অনেক উপকারিতা। এই ব্লগ পড়ে জানুন কিসমিস খাওয়ার উপকারিতাসমূহ কি কি।

কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা

কিসমিস, যা শুকনো আঙ্গুর (Dried Raisins) নামেও পরিচিত, একটি জনপ্রিয় খাবার। এগুলি সারা বিশ্বেই একটি খাবার হিসেবে উপভোগ করা হয়। প্রায় বেকড ফুড, ট্রেইল মিক্স এবং এমনকি প্রায় সকল মিষ্টি জাতীয় খাবারে এটি ব্যবহৃত হয়।

যাই হোক, কিসমিস বিভিন্ন রান্নায় ব্যবহৃত হওয়া ছাড়াও, এটি বিভিন্ন স্বাস্থ্য সুবিধাও সরবরাহ করে। এই ব্লগে, আমরা কিসমিস খাওয়ার কিছু উপকারিতা সম্পর্কে জানব।

আরো পড়ুন- কিসমিস কিভাবে তৈরি হয়

কিসমিসের উপকারিতাসমূহ

১. কিসমিস পুষ্টিগুণে ভরপুর

কিসমিস পুষ্টির একটি বড় উৎস। এগুলিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, পটাসিয়াম, আয়রন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এক কাপ কিসমিসে প্রায় 6 গ্রাম ফাইবার থাকে, যা প্রতিদিনের প্রস্তাবিত খাবারের প্রায় 24%।

কিসমিসে পটাসিয়ামও রয়েছে, যা একটি অপরিহার্য খনিজ যেটি সুস্থ রক্তচাপ এবং হার্টের কার্যকারিতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। উপরন্তু, কিসমিসে আয়রন থাকে, যা সারা শরীরে অক্সিজেন পরিবহনে সাহায্য করে।

২. হজম শক্তি বৃদ্ধি করে

কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা হজমের জন্য উপকারী। ফাইবার নিয়মিত মলত্যাগে সহায়তা করে, কোষ্ঠকাঠিন্য কমায় এবং সামগ্রিক অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে। তাছাড়া, কিসমিসেও প্রাকৃতিক শর্করা থাকে, যা পরিপাকতন্ত্রকে উদ্দীপিত করতে সাহায্য করে।

৩. কোলেস্টোরেল কমাতে সাহায্য করে

প্রতিদিন কিসমিস খাওয়া কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, নিয়মিত কিশমিশ খাওয়া লোকের এলডিএল (খারাপ) কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করতে পারে। কারণ কিসমিসে পলিফেনল এবং ফাইটোস্টেরলের মতো যৌগ থাকে যা কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

আরও দেখুন – মধুর উপকারিতা ও অপকারিতা

৪. ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে

কিসমিসের একটি কম গ্লাইসেমিক সূচক রয়েছে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি করে না। এটি ডায়াবেটিসযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য বা যারা তাদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে চায় তাদের জন্য একটি ভাল খাবারের বিকল্প করে তোলে।

উপরন্তু, কিসমিসে ফাইবার এবং পলিফেনলের মতো যৌগ থাকে, যা ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করতে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

৫. হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে

কিসমিস ক্যালসিয়ামের একটি ভালো উৎস, যা মজবুত হাড় ও দাঁতের জন্য অপরিহার্য। এছাড়াও কিসমিসে বোরনও রয়েছে, একটি খনিজ যা শরীরকে ক্যালসিয়াম শোষণ করতে এবং কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে সহায়তা করে।

৬. নিখুঁত ও সুন্দর ত্বক

সুন্দর ত্বকের জন্য কিসমিস বেশ কার্যকরী। এগুলোতে থাকা পুষ্টি ত্বকের বলিরেখা, সুক্ষ্মরেখা এবং কালো দাগের মতো বার্ধক্য জনিত লক্ষণ গুলি কমাতে সহায়তা করে। এছাড়াও কিসমিসে থাকা ভিটামিন সি ত্বককে ফর্সা ও উজ্জ্বল করে তোলে।

৭. রক্তস্বল্পতা দূর করে

কিসমিসে ভালোমাত্রায় আয়রন থাকে এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্স থাকে, যা নতুন রক্ত গঠনে সহায়তা করে। শরীরের নতুন রক্ত কণিকা গঠনের জন্য এতে প্রয়োজনীয় মিনারেলস ও কপার রয়েছে। কিসমিস শরীরে রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে এবং মাথা ঘোরা, অলসতা ও ক্লান্তি মোকাবেলায় সহায়তা করে।

৮. ওজন বৃদ্ধি করে

স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন বাড়ানোর জন্য কিসমিস হতে পারে একটি ভালো উৎস। এতে ফ্রূকটোজ এবং গ্লুকোজ থাকে যা স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন পাড়াতে সাহায্য করে এবং শরীরে চিনির মাত্রা ঠিক রাখে। এছাড়া এতে অনেক ভিটামিন, অ্যামিনো এসিড, খনিজ সেলেনিয়াম, ফসফরাস এবং প্রোটিন রয়েছে যেগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে।

৯. ক্যান্সার প্রতিরোধ করে

কিসমিস catechins সমৃদ্ধ, যা রক্তে পলিফেনলিক আন্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে পরিচিত। এটি আপনার শরীরের অরগ্যান সিস্টেম এবং কোষগুলো উন্নত করতে ফ্রি রেডিক্যাল সেল থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে। যেগুলি ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি ঘটায়। প্রতিদিনের খাবারে কিসমিসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলির মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারলে ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সহজ হবে।

১০. জ্বর কমায়

কিসমিস জ্বর কমাতে সাহায্য করতে পারে। কিসমিসে জীবাণুনাশক, এন্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সম্পন্ন বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা জ্বর নিরাময় করতে পারে এবং ভাইরাল ও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।

শেষকথা

কিসমিস শুধুমাত্র একটি সুস্বাদু নাস্তাই নয় বরং এটি বিভিন্ন স্বাস্থ্য সুবিধাও প্রদান করে। এগুলো পুষ্টির একটি দুর্দান্ত উত্তস। যা হজমের উন্নতি করতে, কোলেস্টেরল কমাতে, অনাক্রম্যতা বাড়াতে, রক্তে শর্করাকে নিয়ন্ত্রণ করতে এবং হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে।

সুতরাং, পরবর্তীতে যখন আপনি একটি কোন নাস্তা খেতে চাইবেন তখন একটি স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর বিকল্প হিসাবে কিসমিস বেছে নেওয়ার কথা বিবেচনা করুন। আপনি চাইলে খুব সহজে ঘরেই কিসমিস তৈরি করে নিতে পারেন।

FAQs

হ্যাঁ, কিসমিসে থাকে উচ্চ পরিমাণে শর্করা এবং ক্যালোরি। আপনার দৈনিক ক্যালরি চাহিদার অতিরিক্ত কিসমিস খেলে আপনি মোটা হতে পারেন। স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন বাড়ানোর জন্য কিসমিস হতে পারে একটি ভালো উৎস। এতে ফ্রূকটোজ এবং গ্লুকোজ থাকে যা ওজন পাড়াতে সাহায্য করে।

কিসমিসে রয়েছে ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং বিভিন্ন খনিজ যেমন পটাসিয়াম ও আয়রন। কিসমিস খাওয়া হজমের উন্নতি করতে পারে, কোলেস্টেরল কমাতে পারে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে, রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং হাড়ের মজবুত করতে পারে।

খালি পেটে কিসমিস খেলে এর উপকারিতা ও কার্যকারীতা দ্বিগুন হারে বৃদ্ধি পায়। সকালে খালি পেটে কিসমিস খেলে হজমের উন্নতি হবে, কোলেস্টেরল কমতে থাকবে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকবে, এবং হাঁড় মজবুত হবে।

প্রতিদিন এক মুঠো (প্রায় ২৫-৩০ গ্রাম) কিসমিস খাওয়া উপকারী। এটি শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে। তবে, অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া উচিত নয়, কারণ এতে উচ্চ পরিমাণে চিনি ও ক্যালোরি থাকে।

Similar Posts

Leave a Reply