ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার কি কি | ভিটামিন ডি এর উৎস

কিছু কিছু খাবার আছে যেগুলো প্রাকৃতিকভাবে ভিটামিন ডি তে সমৃদ্ধ থাকে। জানুন ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবারের তালিকা বা ভিটামিন ডি’র উৎস সম্পর্কে।

ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার

ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার আমাদের শরীরে Calcium ও Phosphate এর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। তাই আমাদের হাড়, দাঁত ও পেশী সুস্থ রাখতে ভিটামিন ডি’র প্রয়োজন।

অন্যদিকে, Vitamin D -এর অভাব শরীরের বিভিন্ন জায়গায় হাড়ের বিকৃতির কারণ হতে পারে। যেমন শিশুদের Rickets এবং প্রাপ্তবয়স্কদের Osteoma Lacia নামক অবস্থার কারণে হাড়ের ব্যথা হতে পারে।

বর্তমানে বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় ৫০ % শতাংশের ভিটামিন ডি এর অভাব রয়েছে। এবং প্রায় ১ বিলিয়ন মানুষ ভিটামিন ডি জনিত বিভিন্ন অসুখে ভুগছেন। যেমন, শরীরের growth কমে যাওয়া, শিশুদের হাড় বেকে যাওয়া, হাঁড় ক্ষয় হওয়া, মাথার খুলি বড় হয়ে যাওয়া, রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া ইত্যাদি।

ডাক্তার এর পরামর্শ হল প্রতিদিনই বিশেষ করে শরৎ ও শীতকালে প্রত্যেকেরই দৈনিক Vitamin D গ্রহণের কথা বিবেচনা করা উচিত।

তাই, আপনাদের সুবিধার্থে এই ব্লগে শেয়ার করা হলো কোন কোন খাবারে ভিটামিন ডি আছে তার একটি তালিকা ও ভিটামিন ডি এর উৎস

ভিটামিন ডি এর উৎস

নিচে Vitamin D এর কিছু সহজ উৎস দেওয়া হলো যেগুলো দৈনন্দিন জীবনে ও খাদ্য তালিকায় রাখা সম্ভব।

  • সূর্যের আলো
  • ফল ও শাক সবজি
  • চর্বিযুক্ত খাবার
  • ভিটামিন ডি ট্যাবলেট

ভিটামিন ডি যুক্ত খাবারের তালিকা

নিচে প্রতি ১০০ গ্রাম খাবারে ভিটামিন ডি-এর পরিমাণ (IU) দেওয়া হলো:

খাবারভিটামিন ডি (IU)
দুধ (সাধারণ/ফর্টিফাইড)৫০–১৫০
ওটমিল (ফর্টিফাইড)৫০–১৫০
কমলার জুস (ফর্টিফাইড)~১০০
পনির ও ছানা২০–৫০
মাখন৫০–১০০
দই (ফর্টিফাইড)৫০–১০০
গম, রাগী, বার্লি০–২০
বাদাম
মাশরুম (সূর্যালোকে শুকানো)৪০০–২০০০
লাল মাংস (গরু/খাসি)২০–৫০
সামুদ্রিক মাছ (স্যামন, ম্যাকারেল)৩০০–১০০০
ডিমের কুসুম৫০–১০০
শাকসবজি ও ফলমূল০–২০

ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার কি কি

প্রায় মার্চের শেষের দিকে বা এপ্রিলের শুরু থেকে সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত, বেশিরভাগ মানুষই সূর্যের আলো থেকে তাদের প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি গ্রহণ করতে সক্ষম হন।

কিন্তু অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত সুর্যের তেমন তাপ থাকে না ফলে সেখান থেকে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি গ্রহণ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তখন আমাদের খাবার থেকেই প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি এর চাহিদা পুরণ করতে হয়। ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবারসমূহ আমাদের দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় রাখা উচিত।

চলুন জেনে নিই, কোন গুলো ভিটামিন ডি জাতীয় খাবার।

১. দুধ

দুধে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ডি যা আমাদের হাড়ের বৃদ্ধি থেকে শুরু করে বুদ্ধির বিকাশের জন্য খুব জরুরি। শুধু এক গ্লাস দুধ থেকে আমাদের প্রায় ১৫ থেকে ২২% ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পূরণ করতে সক্ষম। আরও পড়ুন- দুধ দিয়ে তৈরি মিল্কশেক এর উপকারিতা।

২. ওটমিল

ওট্মিল হল এমন একটি খাবার যা ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ। এক কাপ ওট্মিলে প্রায় 145 IU Vitamin D থাকে, যা 18% DV এর সমান। ওটমিল শুধুমাত্র ভিটামিন ডি এর ঘাটতিই পূরণ করে না বরং ডায়াবেটিসও নিয়ন্ত্রণে রাখে। সেই সাথে এতে প্রচুর মিনারেলস ও রয়েছে।

৩. কমলার জুস

কমলার রসে প্রাকৃতিকভাবে কোন ভিটামিন ডি থাকে না. তবে যারা দুধ খেতে সক্ষম নয় অথবা দুধে এলার্জি আছে, এমন ব্যক্তিদের জন্য কিছু কোম্পানি কমলার রসের সাথে ভিটামিন ও অন্যান্য পুষ্টি যোগ করে একটি fortified juice তৈরি করে।

যা থেকে প্রায় ১০০ আই ইউ ভিটামিন ডি গ্রহণ করা সম্ভব। তবে এই কমলার রহস্য কিন্তু সবার জন্য একটি দুর্দান্ত বিকল্প নয় কারণ যারা ডায়াবেটিস এর রোগী তাদের রক্তে এটি শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।

৪. পনির বা ছানা

পনির বা ছানা ভিটামিন ও বিভিন্ন খাদ্য পুষ্টির জন্য জন্য খুবই ভালো একটি উৎস। এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, জিংক এবং ম্যাগনেসিয়াম। এছাড়া এতে ভিটামিন বি ১২, ভিটামিন ডি, ভিটামিন সি এবং এ রয়েছে।  পনির হাড়ের স্বাস্থ্য বাড়ায় এবং এতে থাকা ভিটামিন ডি হারকে শক্তিশালী করে এবং এটি অস্টিওপেরোসিস প্রতিরোধ করতেও সক্ষম।

৫. মাখন

মাখনে ভিটামিন ডি রয়েছে যা হাড়ের বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এতে Calcium রয়েছে, যা হাড়ের মজবুতির জন্য অপরিহার্য। ক্যালসিয়াম অস্টিওপোরোসিসের মতো রোগ প্রতিরোধ করতেও সাহায্য করে এবং আপনার ত্বককে স্বাস্থ্যকর করতে সাহায্য করে।

৬. দই

ভিটামিন ডি এর য়ারো একটি সহজলভ্য উৎস হলো দই। এটি খেতে বেশ সুস্বাদু ও পুষ্টিতেও ভরপুর। এটি হজমে বেশ ভালো ভূমিকা রাখে। সেই সাথে এটি  আমাদের দেহের হাঁড় মজবুত করে এবং আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

আরও পড়ুন- দই দিয়ে মাঠা বানানোর নিয়ম।

৭. গম, রাগী, বার্লি ও বাদাম

গম, রাগী ও বার্লীতেও রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন ডি। যা থেকে আমাদের প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি এর চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। এসব শুকনো খাবারো আমাদের শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে।

বিভিন্ন ধরনের বাদামে রয়েছে ভিটামিন ডি। যেমন কাঠবাদাম, চিনাবাদাম, কাজুবাদাম, আখরোট ইত্যাদি। এগুলো আপনার শরীরে ভিটামিন ডি এর মাত্রা বাড়িয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে এবং হাড় ক্ষয় হওয়া রোধ করে।

৮. মাশরুম

মাশরুম হলো ভিটামিন ডি এর এক নিরামিষ উৎস। যেখানে প্রতি ১০০ গ্রাম মাশরুমে প্রায় ১৩০ থেকে ৪৫০ IU পর্যন্ত ভিটামিন ডি সংগ্রহ করা যায়। তাছাড়া যারা মাছ, মাংস খায় না বা নিরামিষভোজী তারা মাশরুম থেকে তাদের ভিটামিন ডি এর চাহিদা পূরণ করতে পারবেন।

৯. লাল মাংস

লাল মাংস বা রেড মিট আমাদের দৈনিক ভিটামিন ডি এর চাহিদা পূরণে অবদান রাখতে পারে। একটি 25 গ্রাম লাল মাংসের টুকরায় ১৫ আই ইউ ভিটামিন ডি থাকে। 

তবে অত্যাধিক লাল মাংস আমাদের হজমে সমস্যা করতে পারে, এছাড়া এর কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে যেমন এটি উচ্চ রক্তচাপ বাড়ায়, ইতি হার্টের চর্বিযুক্ত করে, তাই এটি কম খাওয়াই ভালো।

১০. সামুদ্রিক, তৈলাক্ত এবং চর্বিযুক্ত মাছ

ভিটামিন ডি এর আরেকটি ভালো উৎস হল তৈলাক্ত মাছ ও সামুদ্রিক মাছ। যেমন, স্যামন(salmon), ম্যাকেরেল (mackerel), টুনা (tuna), সার্ডিনস (sardines) এর মতো তৈলাক্ত মাছ মাছ এর মধ্যে সর্বোচ্চ পরিমাণ ভিটামিন দিয়ে থাকে সামনের একটি ছোট টুকরায় প্রায় ২৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন ডি থাকে।

১১. ডিমের কুসুম

একটি বড় ডিমের কুসুমে প্রায় ৩৭ IU  ভিটামিন ডি থাকে। যারা লাল মাংস এবং মাছ খেতে পছন্দ করেনা তারা ডিম খেতে পারেন এতে আপনাদের দৈনিক প্রায় ৫% ভিটামিন ডি এর চাহিদা পূরণ হবে তবে যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তারা বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করবেন।

১২. ভিটামিন ডি যুক্ত শাকসবজি ও ফলমূল

ভিটামিন ডি যুক্ত শাকসবজি হচ্ছে পালং শাক, ঢেঁড়স সয়াবিন, গাজর, ব্রকলি, মিষ্টি আলুতে থেকে প্রতিদিনের ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।

অনেক সময় বাচ্চারা শাকসবজি খেতে চায় না তাদেরকে ফল খাওয়ানো যায়। যেমন, পেপে, কলা, আম, আনারস, স্ট্রবেরি, পিচ ফল, ডালিম, বাঙ্গি। এসব ফলমূলেও ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।

ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবারসমূহ।

FAQs

ভিটামিন ডি বেশি খেলে ক্ষুধা কমে যেতে পারে, মাথা ঘোরা, বমি হওয়া, অল্পতেই শরীরে ক্লান্তি চলে আসা এবং পরবর্তীতে কিডনিতে সমস্যা হতে পারে।

সকাল থেকে বিকাল ৩-৪ টা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ভিটামিন ডি থাকে।

ভিটামিন ডি এর অভাবে বাচ্চাদের Rickets এবং প্রাপ্তবয়স্কদের Osteomalacia নামক অবস্থার কারণে হাড়ের ব্যথা হতে পারে। এছাড়া চুল পড়ে যাওয়া, দুর্বল হয়ে পড়া, হাঁড়ের জয়েন্টে ব্যথা করা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।

শেষ কথা

এই ছিল ভিটামিন ডি যুক্ত খাবারের তালিকা। এই সকল খাবার গুলো থেকে আপনি আপনার শরীরে ভিটামিন ডি এর চাহিদা পুরণ করতে পারবেন। এসব খাবার খাওয়ার পর ও যদি ভিটামিন ডি এর ঘাটতি থাকে তাহলে আপনি ডাক্তাত্রের পরামর্শ অনু্যায়ী Vitamin D Tablet বা Capsule গ্রহণ করতে পারেন।

এরকম সাস্থ্য টিপস ও লাইফস্টাইল সম্পর্কে জানতে নিয়মিত ভিজিটকরুন UprankLife.com ।

Similar Posts

Leave a Reply