ফ্রিজ এবং রেফ্রিজারেটর এর মধ্যে পার্থক্য
ফ্রিজ ও রেফ্রিজারেটর মূলত একই জিনিস। Fridge, Freezer এবং Refrigerator শব্দগুলোর অর্থ পরিষ্কারভাবে না বুঝার কারণে আমরা গুলিয়ে ফেলি।

ফ্রিজ (Fridge) এবং রেফ্রিজারেটর শব্দের মধ্যে আসলে কোন পার্থক্য নেই। কেননা রেফ্রিজারেটর শব্দের সংক্ষিপ্ত রূপ হচ্ছে ফ্রিজ (Fridge)। আমরা অনেকেই Fridge এবং Freezer এর মধ্যে গন্ডগোল পাকিয়ে ফেলি। ফ্রিজার এবং রেফ্রিজারেটর ২টা অংশই একটি Fridge এর মধ্যে থাকে। আবার আলাদাভাবেও Freezer রয়েছে।
এই ব্লগে বিষয়গুলো আপনাদের ধারণার জন্য পরিষ্কার করে বুঝিয়ে বলবো, ইনশাআল্লাহ।
ফ্রিজ কত প্রকার ও কি কি
সাধারণত বাসা বাড়িতে ব্যবহৃত রেফ্রিজারেটরকে আমরা সংক্ষেপে Fridge (ফ্রিজ) বলে থাকি। এই ফ্রিজে দুটি অংশ থাকে – রেফ্রিজারেটর (Refrigerator) অংশ ও ফ্রিজার (Freezer) অংশ।
সাধারণত প্রচলিত অর্থে ফ্রিজার বলতে ডিপ ফ্রিজকে বোঝায় এবং রেফ্রিজারেটর বলতে নরমাল ফ্রিজ বোঝায়।
- Freezer (ফ্রিজার) =ডিপ ফ্রিজ
- Refrigerator (রেফ্রিজারেটর) = নরমাল ফ্রিজ
ফ্রিজার অংশটি ফ্রিজের উপরে বা নিচে যে কোন অংশে থাকতে পারে। যদি ফ্রিজের উপরের অংশে ডিপ ফ্রিজ হয়ে থাকে তাহলে সেটাকে Top freezer অথবা Top Mount Freezer বলা হয়। কিন্তু যদি ফ্রিজের নিচের অংশটি ডিপ ফ্রিজ হয় তাহলে Bottom Freezer/Bottom Mount Freezer বলা হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন:
ফ্রিজার কাকে বলে
ফ্রিজার এর কাজ হল খাবারকে জমাট বেঁধে রাখা। এটি খাবারকে দীর্ঘ সময় ধরে সংরক্ষণ করে। ফ্রিজার সাধারণত -১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার নিচের তাপমাত্রায় কাজ করে। এই নিম্ন তাপমাত্রায় ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক জীবাণু বৃদ্ধি পেতে পারে না, ফলে খাবার দীর্ঘদিন ধরে তাজা থাকে।
রেফ্রিজারেটর কি
সহজ কথায় রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজ হলো এমন একটি যন্ত্র যা তাপমাত্রা অনেক কমিয়ে খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণ করে। তবে বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণ করার জন্য বিভিন্ন মাত্রার তাপমাত্রা প্রয়োজন হয়।
রেফ্রিজারেটরের আবিষ্কারের পর থেকে খাবারকে দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে। ফলে আমরা বিভিন্ন ধরনের খাবার সারা বছর ধরে উপভোগ করতে পারি।
রেফ্রিজারেটর এর কাজ কি
রেফ্রিজারেটর অংশটিতে আমরা সাধারণত ফল, সবজি, তরল পানীয় ইত্যাদি রাখি। নরমাল ফ্রিজ বা রেফ্রিজারেটরে তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৪ ডিগ্রি থেকে সর্বনিম্ন ০ ডিগ্রিতে রাখা হয়।
রেফ্রিজারেশন অংশটিতে সকল ধরনের শাক, সবজি, ফল, ডিম, বিভিন্ন ধরনের সস, আচার ইত্যাদি রাখা যায়। এই অংশকে নন ফ্রস্ট ফ্রিজ বলা যেতে পারে। কেননা এতে কোন খাবার রাখলে সে খাদ্যে বরফ জমে না। রেফ্রিজারেটরে রাখা ফলমূল, শাকসবজি সর্বোচ্চ ১ থেকে ২ সপ্তাহ থাকা ভালো থাকতে পারে। তবে আচার এবং সস জাতীয় খাদ্যদ্রব্য ও কয়েক মাস ভালো থাকে।
এটি সাধারণত খাবারকে ঠান্ডা রাখার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি খাবারকে তাজা রাখতে সাহায্য করে এবং ব্যাকটেরিয়া বা অন্যান্য ক্ষতিকারক জীবাণু বৃদ্ধি রোধ করে।
এটি খাদ্যবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব কমাতে সাহায্য করে। নিম্ন তাপমাত্রায় ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি পেতে পারে না, ফলে খাবার খাওয়ার পরে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। এছাড়াও, রেফ্রিজারেটরে খাবার সংরক্ষণ করার ফলে খাবারের অপচয় কমে।
ফ্রিজ ও রেফ্রিজারেটর পার্থক্য
ফ্রিজার ও রেফ্রিজারেটরের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হল- তাপমাত্রা। ফ্রিজার মাইনাস ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় খাবারে বরফ জমিয়ে খাবারকে সংরক্ষণ করে। অন্যদিকে রেফ্রিজারেটর নিম্ন তাপমাত্রায় খাবার সতেজ রাখে।
ফ্রিজ এবং রেফ্রিজারেটর এর মধ্যে পার্থক্য
বৈশিষ্ট্য | ফ্রিজার | রেফ্রিজারেটর |
তাপমাত্রা | 0°C থেকে -24°C | 1.6°C থেকে 3.6°C |
খাবার সংরক্ষনের ধরন | মাছ, মাংস সহ দ্রুত পঁচনশীল জিনিস | শাকসবজি, ফলমূল, তরল পানীয় |
বিদ্যুৎ ব্যবহার | বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করে | কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করে |
খাদ্য সংরক্ষণের সময় | দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করে | খাবারের উপর নির্ভর করে। এক সপ্তাহ থেকে শুরু করে কয়েক মাস পর্যন্ত। |
কার্যকারিতা | বরফ জমিয়ে খাবার সংরক্ষণ করে | খাবারকে তাজা রাখে |
ইংরেজিতে | Freezer | Fridge বা Refrigerator |
১. তাপমাত্রার পার্থক্য
রেফ্রিজারেটর এবং ফ্রিজার দুটিই খাবারকে তাজা রাখতে ব্যবহৃত হয়। ডিপ ফ্রিজ বা ফ্রিজারের সঙ্গে নরমাল ফ্রিজ বা রেফ্রিজারেটরের প্রধান পার্থক্য হচ্ছে- তাপমাত্রা। ফ্রিজের রেফ্রিজারেশন অংশ সাধারণত ৪ থেকে ০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সেট করা হয়, যা তাজা ফল, সবজি এবং অন্যান্য দ্রুত নষ্ট হওয়া খাবার সংরক্ষণের জন্য উপযুক্ত।
অন্যদিকে, ফ্রিজার ০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে, সাধারণত -১৮ থেকে -২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সেট করা হয়। এটি মাংস, মাছ এবং অন্যান্য খাবারকে দীর্ঘ সময় ধরে সংরক্ষণ করে রাখতে ব্যবহৃত হয়। ফ্রিজার বা ডিপ ফ্রিজে তাপমাত্রার 0 ডিগ্রী থেকে নামিয়ে মাইনাস ডিগ্রিতে নিয়ে যাওয়া কারণে পানি বরফে পরিণত হয়।
রেফ্রিজারেটর খাবারকে ঠান্ডা রাখে, আর ফ্রিজার খাবারে বরফ জমাট বাধিয়ে রাখে। তাই, আপনার খাবারের ধরন অনুযায়ী আপনাকে ফ্রিজের তাপমাত্রা সঠিকভাবে সেট করতে হবে।
আরও পড়ুন: ফ্রিজের তাপমাত্রা কত রাখা উচিত
২. বিদ্যুৎ খরচ
আমরা সবাই জানি যে, রেফ্রিজারেটর এবং ফ্রিজার দুটিই বিদ্যুৎ খরচ করে। ফ্রিজারের কম্প্রেসরকে রেফ্রিজারেটরের তুলনায় বেশি সময় চলতে হয়, যা বিদ্যুৎ খরচ বাড়ায়।
আবার অনেক সময় আমরা নরমাল ফ্রিজ অর্থাৎ রেফ্রিজারেটরের দরজা বার বার খুলে ফেলি। যার ফলে ফ্রিজের ভেতরে তাপমাত্রা পুনরায় কমাতে বেশি বিদ্যুতের খরচ হয়। তাই ফ্রিজের দরজা বারবার খোলা খুলবেন না। একেবারে যা প্রয়োজন তা নিয়ে নিবেন।
ফ্রিজ ব্যবহারে সতর্কতা
- ফ্রিজে অতিরিক্ত খাবার রাখলে যন্ত্রের কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে এবং খাবার দ্রুত নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- গাজর, টমেটো, মরিচ ইত্যাদি শাকসবজি দীর্ঘদিন ফ্রিজে রাখলে তাদের পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায় এবং স্বাদ কমে যায়।
- মাংস, ফল এবং শাকসবজি একসাথে রাখলে ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং খাবার নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
- খাবারগুলোকে ঠিকভাবে প্যাক করে রাখতে হবে। যাতে তাদের মধ্যে কোনো গন্ধ বা রস না মিশে যায়।
- ফ্রিজ নিয়মিত পরিষ্কার করে রাখতে হবে যাতে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে না পারে।
ফ্রিজার এবং রেফ্রিজারেটরের মধ্যে পার্থক্য বুঝলে পারলে আপনি অবশ্যই খাবার ফ্রিজের সঠিক জায়গায় রাখতে পারবেন।
ফ্রিজার এবং রেফ্রিজারেটর, এই দুটি শব্দ আমরা প্রায়শই একই অর্থে ব্যবহার করলেও, তাদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে আশা করি তা আর্টিকেলটি বোঝাতে সক্ষম হয়েছে। তাপমাত্রার তারতম্যই এই দুইয়ের মধ্যে মূল পার্থক্য। ফ্রিজার খাবারে জমাট বাঁধিয়ে রাখে, আর রেফ্রিজারেটর খাবারকে তাজা রাখতে সাহায্য করে।