কম আলোতে বেঁচে থাকা ইনডোর প্লান্টসমূহ

ঘরে সূর্যের আলো কম আসলেও আপনি ইনডোর প্লান্ট দিয়ে ঘর সাজাতে পারবেন। দেখুন এই কম আলোতে বেঁচে থাকা ইনডোর প্লান্টসমূহ যেগুলো আপনি ঘরে রাখতে পারেন।

কম আলোতে বেঁচে থাকা ইনডোর প্লান্ট

আমরা অনেকেই ঘর সাজানোর জন্য ইনডোর প্লান্ট গাছ রাখতে ভালোবাসি। ঘরের ভেতর সবসময় সূর্যের আলো পাওয়া যায় না বিশেষ করে যাদের ঘরে জানালা কম বা ছোট। আবার ইনডোর প্লান্টে সময়মত পানি দেয়া বা যত্ন নেয়াও হয়না।

তবে চিন্তার কিছু নেই, এমন অনেক ইনডোর প্লান্ট আছে, যেগুলো কম যত্নে ও কম আলোতে সহজেই বেঁচে থাকতে পারে এবং আপনার ঘরকে সতেজ ও প্রাণবন্ত করে তুলতে পারে।

আসুন জেনে নেই কম আলোতে বেঁচে থাকা কিছু ইনডোর প্লান্টের নাম এবং কেন এগুলো আপনার ঘরের জন্য উপযুক্ত।

১. স্নেক প্লান্ট (Snake Plant)

এই গাছটি দেখতে সুন্দর। এই গাছের পাতা লম্বাটে ও কিছুটা মোটা হয়। বাতাস পরিশোধনের জন্য এটি অন্যতম সেরা ইনডোর প্লান্ট। স্নেক প্ল্যান্টটি খুব ধীরগতিতে বৃদ্ধি পায় এবং কম আলোতে ভালোভাবে টিকে থাকতে পারে।

এ গাছে অতিরিক্ত পানি দিতে হয়না, অতিরিক্ত পানি দিলে এর শিকড় সহজেই পচে যেতে পারে। সপ্তাহে একবার পানি দিলেই যথেষ্ট। মাঝে মধ্যে পাতাগুলো মুছে দিলে ধুলাবালি জমবে না এবং গাছ সুন্দর ও ভাল থাকবে।

২. পোথোস (Pothos) বা মানি প্লান্ট

মানি প্লান্ট - কম আলোতে বেঁচে থাকা ইনডোর প্লান্ট
মানিপ্লান্ট – কম আলোতে বেঁচে থাকা ইনডোর প্লান্ট

এই গাছের পাতা হৃদয় আকৃতির এবং চকচকে সবুজ রঙের হয়। এটি লতানো গাছ, তাই ঝুলিয়ে রাখা যায় অথবা দেয়ালের পাশে রেখে দিলে সুন্দর দেখায়। মানি প্ল্যান্ট বাতাস থেকে টক্সিন শোষণ করতে সক্ষম, ফলে আপনার ঘরের বাতাস বিশুদ্ধ রাখতে সাহায্য করে।

মানি প্ল্যান্ট গাছে খুব বেশি যত্নের প্রয়োজন নেই, শুধু মাঝে মধ্যে মাটি শুকিয়ে গেলে পানি দিতে হবে। এটি কম আলোতেও বেঁচে থাকতে পারে, তবে মাঝেমধ্যে হালকা সূর্যের আলো দিলে ভালো বৃদ্ধি পায়। এ গাছের কাটিং নিয়ে সহজেই নতুন গাছ তৈরি করা যায়। এই গাছ শুধুমাত্র স্বচ্ছ পানিতেও ভাল জন্মায়।

আরও দেখুন – মানি প্লান্ট গাছের যত্ন

৩. জিজি প্লান্ট (ZZ Plant)

এটি দেখতে কিছুটা রাবারের মতো, পাতা গাঢ় সবুজ এবং চকচকে হয়। এ গাছটি খুব ধীরে বাড়ে এবং কম আলোতেও সহজে বেঁচে থাকতে পারে। বাতাস পরিশোধনের জন্য NASA-এর তালিকাভুক্ত একটি চমৎকার ইনডোর প্লান্ট।

বেশি পানি দিলে শিকড় পচে যেতে পারে, তাই মাটি শুকিয়ে গেলে তবেই পানি দিন। সরাসরি সূর্যের আলো একেবারেই প্রয়োজন নেই, ছায়াযুক্ত জায়গায় সহজেই বেড়ে ওঠে। জিজি প্ল্যান্টে বছরে একবার সার দিলেই ভালো বৃদ্ধি পাবে।

৪. স্পাইডার প্লান্ট (Spider Plant)

এই গাছের পাতা সরু এবং দীর্ঘ হয়, দেখতে কিছুটা মাকড়সার মতো ঝুলে থাকে বলে এর নাম “স্পাইডার প্ল্যান্ট”। এটি বাতাস থেকে ক্ষতিকর রাসায়নিক শোষণ করতে পারে, তাই আপনার ঘরের পরিবেশ বিশুদ্ধ রাখতে সহায়ক। স্পাইডার প্ল্যান্ট গাছটি খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং সহজেই নতুন চারা তৈরি করে।

স্পাইডার প্লান্টের যত্ন নিয়েও আপনাকে খুব ঝামেলা পোহাতে হবে না। সপ্তাহে ২-৩ বার পানি দিলেই যথেষ্ট। এটি সরাসরি রোদ না পেলেও ছায়ায় সহজে বেড়ে উঠতে পারে। স্পাইডার প্ল্যান্টে মাঝেমধ্যে পাতাগুলো কেটে দিলে সুন্দরভাবে বৃদ্ধি পাবে।

৫. পিস লিলি (Peace Lily)

পিস লিলি গাছে সুন্দর সাদা ফুল হয়, যা দেখতে অনেকটাই শুদ্ধতার প্রতীক লিলির মতো। এই গাছটিও কম আলোতে টিকে থাকতে পারে এবং ঘরের বাতাস বিশুদ্ধ করতে সাহায্য করে।

পিস লিলি আর্দ্রতা পছন্দ করে, তাই বাথরুম বা রান্নাঘরের মতো স্থানেও ভালোভাবে বেড়ে উঠতে পারে।

পিস লিলি গাছের মাটি শুকিয়ে গেলে পানি দিতে হবে, তবে অতিরিক্ত পানি দেওয়া যাবে না। এটি ছায়াযুক্ত জায়গায় রাখতে হবে, তবে মাঝে মাঝে হালকা আলোতে রাখলে ফুল ফুটতে সাহায্য করবে। পিস লিলি গাছের পাতা মাঝে মাঝে পরিষ্কার করলে পাতাগুলো উজ্জ্বল ও ভালো দেখাবে।

৬. ক্যালাথিয়া (Calathea)

ক্যালাথিয়া গাছের প্রায় ৫০টির ও বেশি প্রজাতি আছে। এই গাছের পাতা খুবই আকর্ষণীয়, এতে সুন্দর নকশা থাকে। এই গাছটি হালকা ছায়াযুক্ত জায়গায় ভালোভাবে বেড়ে উঠতে পারে।

এই গাছটিতে নিয়মিত পানি দিতে হবে, তবে অতিরিক্ত পানি দিলে শিকড় পচে যেতে পারে। এই গাছটিতে সরাসরি রোদ এড়িয়ে চলতে হবে, কারণ তীব্র আলোতে পাতার রঙ ফিকে হয়ে যেতে পারে। আপনি মাঝে মাঝে পাতায় পানি স্প্রে করলে গাছ সতেজ থাকবে।

৭. ড্রাসিনা (Dracaena)

ড্রাসিনা - কম আলোতে বেঁচে থাকা ইনডোর প্লান্ট

ড্রাসিনা যাকে অনেকে ড্রাকেনাও বলে থাকে। ড্রাসিনা গাছটি দেখতে অনেকটা ছোটখাটো পাম গাছের মতো, এর লম্বা, সরু পাতা থাকে। এটি বাতাস থেকে ক্ষতিকর টক্সিন দূর করতে পারে। এই গাছটি কম আলোতেও সহজে বেঁচে থাকতে পারে এবং ধীরগতিতে বৃদ্ধি পায়।

ড্রাসিনা গাছটির মাটি শুকিয়ে গেলে তবেই পানি দেওয়া উচিত। এটি আর্দ্রতা পছন্দ করে, তাই মাঝে মাঝে স্প্রে করলে ভালো হয়। এই গাছটিতে খুব বেশি সার দেওয়ার দরকার নেই, বছরে এক-দুইবার দিলেই যথেষ্ট।

৮. অ্যালোভেরা

অ্যালোভেরা - কম আলোতে বেঁচে থাকা ইনডোর প্লান্ট

ঘর সাজানোর জন্য কম আলোতে বেঁচে থাকা একটি গাছ খুঁজছেন? তাহলে অ্যালোভেরা রাখতে পারেন। অ্যালোভেরা যাকে বাংলায় ঘৃতকুমারী বলা হয়। ভেষজ গুণে ভরপুর এই গাছটাকে যদি বারান্দার এক কোণে রেখে দেন, দেখবে কতভাবে কাজে লাগে।

হালকা কোনো পুড়ে যাওয়া বা পোকা কামড়ালেই এর পাতার ভেতরের জেল লাগিয়ে দিলে একদম ম্যাজিকের মতো কাজ করে। ঠান্ডা ঠান্ডা একটা আরাম অনুভব হবে। এছাড়া ত্বক আর চুলের যত্নেও অ্যালোভেরা অনন্য – একদম ন্যাচারাল কেয়ার!

আর একটা দারুণ ব্যাপার হচ্ছে, অ্যালোভেরা গাছের জন্য খুব বেশি রোদ বা আলো এবং স্পেশাল যত্ন লাগে না। মাঝারী একটা পটে রাখলেই চলবে। পানি বেশি দিতে হবে না, শুধু মাটি শুকিয়ে গেলে একটু পানি দিলেই বেঁচে থাকবে।

শেষ কথা

কম আলোতে বেঁচে থাকা ইনডোর প্লান্টগুলোর মধ্যে উপরের গাছগুলো সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। ইনডোর প্ল্যান্টের উপকারিতা অনেক, এগুলো শুধু ঘরের শোভাই বাড়ায় না, বরং বাতাস পরিশোধন করে, মানসিক প্রশান্তি দেয় এবং ঘরকে আরো বেশি প্রাকৃতিক ও আরামদায়ক করে তোলে।

আপনি যদি কম আলোয় টিকে থাকা একটি সুন্দর ইনডোর প্লান্ট খুঁজছেন, তাহলে উপরের তালিকা থেকে আপনার পছন্দমত ২/১টি গাছ যেকোনো একটি বেছে নিতে পারেন।

ইনডোর প্লান্ট নিয়ে আরও ব্লগ:

Similar Posts

Leave a Reply