ছারপোকা কামড়ালে কি হয়? লক্ষণ, প্রতিকার ও বাঁচার উপায়
ছারপোকা কামড়ালে ত্বকে চুলকানি, লাল দাগ ও অ্যালার্জির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। জানুন ছারপোকার কামড়ের লক্ষণ, করণীয় ও প্রতিরোধের উপায়।

ছারপোকা এক ধরনের ছোট্ট রক্তচোষা পরজীবী, যা সাধারণত বিছানা, সোফা, মাদুর ও কাঠের আসবাবপত্রে লুকিয়ে থাকে। এরা মানুষের রক্ত খেয়ে বেঁচে থাকে এবং রাতে বেশি সক্রিয় হয়।
ছারপোকার কামড়ে সরাসরি প্রাণঘাতী ক্ষতি না হলেও এটি অত্যন্ত বিরক্তিকর এবং অস্বস্তিকর হতে পারে। ঘুম থেকে উঠে শরীরে লালচে ফোলা দাগ দেখে আপনি আতঙ্কিত যে এটি কিসের দাগ? হতে পারে এটি ছারপোকার কামড়ের লক্ষণ।
এই ব্লগে আমরা জানবো ছারপোকা কামড়ালে কি হয়, এটি থেকে কি রোগ হতে পারে ও প্রতিরোধের উপায় বা আপনার করণীয় কি।
ছারপোকা কামড়ালে কি হয়?
ছারপোকার কামড় সাধারণত ব্যথাহীন হয়, কারণ ছারপোকা তার লালারসের মাধ্যমে শরীরের সেই অংশটি অনুভূতিহীন করে ফেলে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর কামড়ের স্থানে চুলকানি, লাল ফোলা দাগ এবং জ্বালাপোড়া অনুভূত হতে পারে।
সাধারণত, ছারপোকার কামড়ে ত্বকে লালচে ছোট ফোলা দাগ হয়। তীব্র চুলকানি হয়। সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি হয় (চুলকানোর ফলে)। দীর্ঘদিনের কামড়ের ফলে ঘুমের সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও অ্যালার্জির সমস্যা বাড়তে পারে।
ছারপোকা কামড়ালে কি করতে হয়?
ছারপোকা কামড়ালে যদি চুলকানি বা জ্বালাপোড়া হয়, তাহলে কিছু সাধারণ ঘরোয়া ওষুধ ব্যবহার করে উপশম পেতে পারেন।
- কামড়ের স্থানে বরফ বা ঠান্ডা পানি দিয়ে সেঁক দিলে চুলকানি কমবে। অ্যালোভেরা জেল বা লোশন এটি প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি হিসেবে কাজ করে এবং ত্বকের জ্বালা কমায়।
- অ্যান্টি-হিস্টামিন ক্রিম বা লোশন চুলকানি ও অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া কমাতে সহায়ক।
- লবণ বা বেকিং সোডার পেস্ট এটি প্রাকৃতিকভাবে ত্বকের চুলকানি ও জ্বালা কমাতে সাহায্য করে।
- কামড়ের স্থান পরিষ্কার রাখতে জীবাণুনাশক সাবান ব্যবহার করা উচিত, যাতে কোনো সংক্রমণ না হয়।
ছারপোকা কামড়ালে কি রোগ হয়?
ছারপোকার কামড়ে সাধারণত নির্দিষ্ট কোন রোগ হয় না। তবে ছারপোকার কামড়ে বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত সমস্যা ও ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন।
ছাড়পোকার কামড়ে যেসব ক্ষতি বা অসুবিধা হতে পারে।
১. তীব্র চুলকানি ও অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া
অনেকের শরীর ছারপোকার লালারসের সংস্পর্শে এলে তীব্র অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া দেখায়। বেশ কিছু গবেষণা জানা যায়, ছারপোকার কামড়ের কারণে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কমতে থাকে। শরীরের বেশ কিছু পরিবর্তন হওয়ার কারণে মানসিক চাপ ও উদ্যোগের মাত্রা বাড়ে।

২.ত্বকের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি
ছারপোকার কামড় ত্বকের ছোট অংশে ফুসকুড়ি হওয়া থেকে শুরু করে বড় ধরনের ফোসকা পড়ার মতো প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যেতে পারে। ছারপোকার কামড়ে শরীরের তীব্র চুলকানি এবং ফোসকা পড়ে।
তীব্র চুলকানি এবং ফোসকা পড়ার কারণে ত্বকে স্থায়ী দাগের সম্ভাবনা থাকে। অতিরিক্ত চুলকানোর ফলে ত্বকে ক্ষত তৈরি হতে পারে, যা পরবর্তীতে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।
৩. ঘুমের সমস্যা
ছারপোকা রাতে সক্রিয় থাকে, তাদের কামড়ের কারণে রাতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। এটি এক ধরনের মানসিক চাপ। ছারপোকার কামড়ের শারীরিক প্রভাবের পাশাপাশি মানসিক প্রভাবও পড়ে।
৪. রক্ত সল্পতার সম্ভাবনা
ছারপোকার কামড়ের বড় একটি সমস্যা হল এরা পর্যায়ক্রমে রক্ত শোষণ করে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে,যারা অনেক দিন ধরে ছারপোকার কামড় খেয়ে আসছেন তাদের শরীরে লোহিত রক্ত কণিকার মাত্রা কমে যেতে শুরু করে।
এতে করে তাদের রক্তাল্পতায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ করে শিশু এবং দুর্বল ব্যক্তিদের জন্য এটি আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে থাকে।
৫. ছারপোকার কামড়ের কারণে শ্বাসকষ্টে ঝুঁকি
ছারপোকার কামড়ে শরীরে এলার্জি প্রতিক্রিয়া হতে পারে যা শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা সৃষ্টি করে থাকে। কোন ব্যক্তি বারবার ছারপোকার কামড়ে শিকার হন তাহলে তার শ্বাসকষ্টের ঝুঁকি থাকে।
চিকিৎসকদের মতে, যারা এজমা রোগে ভুগছেন, তাদের আশেপাশে যদি ছারপোকার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, তাদের রোগের প্রকোপ আরো বেড়ে যায়।
৬. শরীরের লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়া
ছারপোকার কামড়ের কারণে আমাদের শরীরের লিম্ফ নোড ফুলে যেতে পারে। শরীরের রক্ত চলাচল প্রতিক্রিয়া বাধা সৃষ্টি করে এটি এক ধরনের প্রতিরোধী প্রতিক্রিয়া। ছারপোকার কামড়ে লিম্ফ নোড ফুলে গেলে ব্যথা ও অস্বস্তি দেখা দিতে পারে।
ছারপোকা কামড়ালে করণীয়
ছারপোকার কামড় থেকে বাঁচতে যে কোন উপায়ে আপনার ঘর থেকে ছারপোকা তাড়াতে হবে। ছারপোকা দূর করতে কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। দেখুন ছারপোকা তাড়ানোর উপায় কি।
- বিছানা ও আশপাশ পরিষ্কার রাখা: আপনার ঘরের বিছানার চাদর বালিশের কভার এগুলো নিয়মিত শাবান ও গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। নিয়মিত বিছানার চাদর, বালিশের কভার ও তোশক পরিষ্কার করা উচিত।
- বিছানা-বালিশ রোদে দেয়া: ছারপোকা গরম তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে না, তাই আপনার গরম পানিতে কাপড় ধোয়া এবং গরম বাতাসে বিছানার চাদর শুকানোর অভ্যাস করা উচিত।
- ঘরোয়া প্রতিকার: ল্যাভেন্ডার অয়েল, পিপারমিন্ট অয়েল বা লবঙ্গের গুঁড়ো ছারপোকা দূর করতে সহায়ক হতে পারে।
- বিছানার ফাঁক-ফোঁকর চেক করা: ছারপোকা সাধারণত বিছানার কোণ, কাঠের ফাটল এবং আসবাবের নিচে লুকিয়ে থাকে। তাই এগুলো ভালোভাবে পরীক্ষা করে পরিষ্কার রাখা উচিত।
- পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস: আপনার বিছানায় যদি ছারপোকা দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে আর যদি সমস্যা বেশি হয়, তবে পেশাদার পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিসের সাহায্য নেওয়া ভালো।
চিরতরে ছারপোকা দূর করার উপায়
ন্যাপথলিন ছারপোকা তাড়াতে খুবই কার্যকরী। যেসব জায়গায় ছারপোকা বেশি আছে মাসে দুইবার বা তিনবার ন্যাপথলিন গুরু করে সে সমস্ত জায়গায় ছিটিয়ে দিতে পারেন। বিছানার চাদর, বালিশের কভার, কাঁথা গরম পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলুন। এতে ছারপোকা ও ছারপোকার ডিম নষ্ট হবে।
ছারপোকা দূর করার কিছু কার্যকরী টিপস জানতে দেখুন এই ব্লগটি – চিরতরে ছারপোকা দূর করার উপায়।
আমরা জানতে পারলাম ছারপোকা কামড়ালে কি হয়। ছারপোকার কামড়ে তেমন গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি না থাকলেও এটি চুলকানি, অ্যালার্জি এবং ঘুমের সমস্যার কারণ হতে পারে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং ছারপোকার উপদ্রব হলে তা দুর করা জরুরী।
ছাড়পোকার কামড়ে যদি কোন শারীরিক সমস্যা সমস্যা গুরুতর হয়ে যায়, তবে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।