রান্নাঘর ঠান্ডা রাখার উপায় – কার্যকরী ৫ টিপস

গরমকালে রান্নার সময় রান্নাঘর হয়ে উঠে অসহ্য গরম? রান্নাঘর ঠান্ডা রাখার এই ৫টি কার্যকরী উপায় অনুসরণ করতে পারেন। রান্নার সময় রান্নাঘর থাকবে স্বাভাবিক ঠান্ডা।

রান্নাঘর ঠান্ডা রাখার কার্যকরী উপায়

গরমকালে রান্নাঘরে ঢুকলেই যেন মনে হয় চুলার আগুনে পুরো ঘরটাই জ্বলে যাচ্ছে। আমি নিজেই বহুবার ভেবেছি—“এভাবে আর কতদিন রান্না করা যায়!” বিশেষ করে দুপুরবেলা যখন চুলা, গরম বাতাস আর ঘামের চাপ একসাথে পড়ে, তখন রান্নার আনন্দটা উল্টে দুঃখে পরিণত হয়।

আমার অভিজ্ঞতা থেকে শিখেছি, কিছু ছোটখাটো কৌশল মেনে আপনি রান্নাঘর ঠান্ডা রাখতে পারবেন। আসুন দেখে নিই রান্নাঘর ঠান্ডা রাখার কিছু কার্যকরী উপায়, যা আপনার রান্না ঘরকে আগের চেয়ে অনেকটা স্বস্তিদায়ক করে তুলবে।

রান্নাঘরের তাপমাত্রা কমানোর উপায়

রান্নাঘর ঠান্ডা রাখার কয়েকটি উপায় হলো: জানালা খোলা, এগজস্ট ফ্যান ব্যবহার, হালকা রঙের পর্দা ব্যবহার, রান্নাঘরে কিছু ইনডোর প্লান্ট রাখা, রান্না করার সময় সুতির পোশাক পরিধান, দেওয়াল হালকা রঙের করা ইত্যাদি।

রান্নাঘরের তাপমাত্রা কমাতে কিছু কার্যকর উপায় অনুসরণ করতে পারেন:

১. পর্যাপ্ত বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা রাখুন

রান্নাঘরের ডিজাইন করতে রান্নাঘরে একটি বড় জানালা রাখুন। তবে খেয়াল রাখুন সরাসরি সূর্যের আলো যেন প্রবেশ না করে, কারণ সূর্যের আলো আপনার রান্নাঘরের ভেতরের তাপমাত্রা আরও বাড়িয়ে দিবে।

আর অবশ্যই রান্নাঘরে Exhaust Fan অথবা কিচেন চিমনি ব্যবহার করুন। এতে রান্নাঘরের গরম বাষ্প দ্রুত বের হয়ে যাবে, ফলে রান্নাঘর ঠান্ডা থাকবে এবং রান্নাঘরের দুর্গন্ধ কম হবে।

দেখুন – রান্নাঘরে বাতাস চলাচলা বাড়ানোর উপায়

আরও পড়ুন:

  • রান্নাঘর থেকে মাছি তাড়ানোর উপায়
  • রান্নাঘরের দুর্গন্ধ দূর করার ঘরোয়া উপায়

২. ইনডাকশন কুকার বা প্রেসার কুকার ব্যবহার করুন

ইন্ডাকশন কুকার এবং প্রেসার কুকারে খুব একটা তাপ তৈরি হয় না। তাই, রান্নাঘর ঠান্ডা রাখার জন্য আপনি ইন্ডাকশন কুকার অথবা প্রেসার কুকার ব্যবহার করতে পারেন।

৩. দেয়ালে হালকা রং

দেয়ালের রং হালকা থাকলে দেওয়াল কম তাপ শোষণ করে। যার ফলে রান্নাঘর কম গরম অনুভূত হয়। দেয়ালের রং সাদা হলে সবথেকে বেশি ভালো হয়। কারণ সাদা রঙের তার ধারণক্ষমতা সবথেকে কম। তাই রান্নাঘরের দেওয়ালে সাদা রঙের পেইন্ট ব্যবহার করুন।

৪. বরফ বা ঠান্ডা পানি 

বরফ বা ঠান্ডা পানি ভর্তি পাত্র রান্নাঘরে রেখে দিন। রান্না ঘরে ফ্যান চললে এই বরফ পানির জন্য রান্না ঘরের ভেতরের বাতাস ঠান্ডা হয়ে উঠবে। বরফ গলে যাওয়ার সময় তার আশেপাশের বাতাস থেকে তাপ শোষণ করে। এই কারণেই বরফের পাত্রের কাছাকাছি বাতাস ঠান্ডা হয়ে যায়।

৫. সকালের দিকে রান্না সেরে নিন

সকালের দিকে বাইরের তাপমাত্রা অপেক্ষাকৃত কম থাকে, তাই রান্নাঘরে গরম কম অনুভূত হয়। সকালে রান্না সেরে নিলে দিনের বাকি সময়টা আরামে কাটানো যায়। দুপুরে যখন রোদ তীব্র থাকে, তখন রান্না করা থেকে বিরত থাকুন। 

কিচেন কুলিং টিপস

কিছু ছোট ছোট টিপস অনুসরণ করলে রান্নাঘর ঠান্ডা রাখা সম্ভব।

টিপসউপকারিতা
এক্সহস্ট ফ্যান ব্যবহার করুনগরম বাতাস দ্রুত বের হয়
রান্নাঘরে গাছ রাখুনবাতাস শুদ্ধ হয় এবং ঠান্ডা অনুভূত হয়
হালকা রঙের পর্দা ব্যবহার করুনসূর্যের তাপ কম ঢোকে
ভেজা কাপড় ঝুলিয়ে রাখুনবাতাসকে ঠান্ডা করে

রান্নার সময় কম তাপ উৎপন্ন কারী লাইট ব্যবহার করুন, যেমন LED লাইট।

রান্নাঘর গরম হওয়ার বিভিন্ন কারণ

কারণ ১: গ্যাসের চুলা ও রান্নার তাপ

আমাদের দেশে বেশিরভাগ রান্নাই হয় গ্যাস চুলায়। চুলার আগুন সরাসরি তাপ ছড়ায়, আর সেটা দ্রুত রান্নাঘরের ভেতরে জমে যায়। বিশেষ করে যখন একসাথে একাধিক চুলা জ্বালানো হয়, তখন গরমটা দ্বিগুণ বেড়ে যায়। শুধু তাই নয়, প্রেসার কুকার, ফ্রাই বা ডিপ ফ্রাইয়ের সময় তাপ আরও বেশি ছড়ায়।

কারণ ২: জানালা ও ভেন্টিলেশন সমস্যা

অনেক রান্নাঘরেই পর্যাপ্ত জানালা বা খোলা জায়গা থাকে না। ফলে বাইরের বাতাস ঢুকতে পারে না আর ভেতরের তাপও বের হয় না।

আবার শুধু জানালা থাকলেই হবে না, জানালা যদি এমন জায়গায় হয় যেখানে বাতাস ঢোকার সুযোগ কম, তাহলেও রান্নাঘর গরম থেকে মুক্তি পায় না।

তাছাড়া অনেক রান্নাঘরে এক্সহস্ট ফ্যান বা ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা থাকে না, ফলে ধোঁয়া, বাষ্প আর তাপ ভেতরেই জমে থাকে।

কারণ ৩: গরমকালে দুপুরে অতিরিক্ত রান্না

গরমের সময় যদি একসাথে বেশি রান্না করা হয়, যেমন ভাত, তরকারি, ভাজা, ভর্তা—সব একসাথে তৈরি করতে গেলে রান্নাঘরে তাপের মাত্রা দ্রুত বাড়ে। আবার দুপুরবেলার কড়া রোদে রান্না করলে ঘরের বাইরের গরমও ভেতরে এসে মিশে যায়।

উপসংহার

রান্নাঘরের অসহ্য গরম থেকে মুক্তি পেতে উপরোক্ত পদ্ধতি গুলো অবলম্বন করে আপনি সহজেই একটি আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করতে পারেন।

গরমের সময় দ্রুত ও সহজে রান্না করা খুবই জরুরি। দ্রুত রান্না করা যায় এমন রেসিপি বেছে নিন। প্রেসার কুকার ব্যবহার করে দ্রুত রান্না সেরে নিন। একসাথে রান্না করলে বারবার রান্নাঘরে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না, ফলে গরম কম লাগে।

রান্নার প্রস্তুতি আগে থেকে সেরে রাখা খুবই বুদ্ধিমানের কাজ। এতে অনেক সময় বাঁচে এবং রান্নাঘরে গরম কম লাগে। শাকসবজি কাটা, মসলা বাটা ইত্যাদি কাজ আগে থেকে করে রাখুন। একবারে অনেক সবজি কেটে ফ্রিজে রেখে দিন।

সুতি, ঢিলেঢালা পোশাক পরুন। প্রচুর পানি পান করে শরীরকে আর্দ্র রাখুন। শরীরে লবণের ভারসাম্য বজায় রাখতে খাবার স্যালাইন পান করুন।

কিছু সহজ পরিবর্তন এনে এবং কৌশল অবলম্বন করে আপনার রান্না ঘরকে ঠান্ডা রাখুন এবং রান্নার সময়কে আরামদায়ক করে তুলুন।

Similar Posts

মন্তব্য করুন