দরজা-জানালার জন্য সঠিক পর্দার ডিজাইন বাছাই করার ৮ টিপস

সঠিক পর্দার ডিজাইন ঘরের সৌন্দর্য্য বাড়িয়ে দেয় বহুগুন। আপনার ঘরের দরজা জানালার জন্য সঠিক পর্দা বাছাই করার ৮ টিপস

পর্দার ডিজাইন বাছাই করার টিপস

ঘরের সাজসজ্জায় সবচেয়ে সহজ কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে জিনিসটা অনেকেই অবহেলা করেন, তা হলো পর্দা। দরজা জানালার পর্দা শুধু সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য নয়, বরং ঘরের পরিবেশ, আলো-বাতাস আর প্রাইভেসি, সবকিছুতেই বিশাল ভূমিকা রাখে।

একটা সুন্দর Curtain আপনার পুরো ঘরের লুকটাই বদলে দিতে পারে, আবার ভুল ডিজাইনের পর্দা রুমের সৌন্দর্য নষ্টও করে দিতে পারে।

তাই ঘরের দেয়ালের রঙ, জানালার মাপ, দরজার অবস্থান—সব কিছু বুঝে ঠিক কোন ধরনের পর্দা মানানসই হবে, সেটা জানা খুব দরকার। কারণ, আপনার ঘর যেমনই হোক না কেন, সঠিক Curtain বাছাই জানালা-দরজাকেও করে তুলতে পারে একটা সুন্দর ফোকাল পয়েন্ট।

আজকের গাইডে আমরা জানবো, ঘরের দরজা ও জানালার জন্য কেমন ধরনের পর্দা সিলেক্ট করা উচিত এবং সঠিক পর্দার ডিজাইন বাছাই করার সময় কী কী বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।

সঠিক পর্দার ডিজাইন বাছাই করার টিপস

পর্দা বাছাই করা মানে কিন্তু শুধু পছন্দমতো রঙ বা ডিজাইন দেখে কিনে ফেলা নয়। একটু ভুল করলেই ঘরের লুকটাই মিসম্যাচ হয়ে যেতে পারে। তাই জানালার সাইজ, ঘরের রঙ, আলো-বাতাসের প্রবেশ—এসব মাথায় রেখে পর্দা সিলেক্ট করা উচিত।

চলুন দেখে নিই কিছু সহজ টিপস, যা ফলো করলে আপনি খুব সহজেই আপনার ঘরের জন্য পারফেক্ট পর্দা (Curtain) বেছে নিতে পারবেন

১. পর্দার কালার এবং ডিজাইন

বেডরুমের পর্দার ডিজাইন
বেডরুমে ব্ল্যাকআউট পর্দা

দরজা ও জানালার পর্দা কেনার ক্ষেত্রে প্রথমেই আপনাকে ঠিক করতে হবে কোন রংয়ের পর্দা নিবেন। পর্দার কালার বাছাই করার ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার রুমের দেয়ালের কালার বিবেচনা করতে হবে।

আপনার ঘরের দেয়াল যদি ডার্ক বা ঘাড় কালারের হয়, তাহলে হালকা বা নিউট্রাল টোনের পর্দা বেশি মানাবে। আবার হালকা রঙের দেয়ালের ক্ষেত্রে, একটু Bold বা ঘাঢ় রংয়ের পর্দা বেশি ভাল লাগবে। এতে ঘর দেখতে আরও আকর্ষণীয় লাগবে।

আরেকটা বিষয় হচ্ছে আপনার রুমের সাইজ ছোট হলে, দেয়ালের কালারের সাথে মিলিয়ে হালকা কালারের পর্দা ব্যবহার করুন। এতে রুম একটু খোলামেলা ও ক্লিন দেখাবে।

নিচের চার্টে দেয়ালের রং অনুসারে পর্দার রং সাজেস্ট করা হলো।

ঘরের দেয়ালের রং

পর্দার রং

হোয়াইট / অফ হোয়াইট

ডার্ক ব্লু, ডিপ গ্রিন, মারুন, ডার্ক ব্রাউন

হালকা গ্রে / অ্যাশ

পীচ, বেবি পিংক, সিলভার, ব্লু-গ্রে, টু-টোন শেড

লাইট ক্রিম / বেইজ

ডিপ ব্রাউন, গোল্ডেন, অলিভ গ্রীন, রস্ট কলার

হালকা প্যাস্টেল রঙ (ব্লু, গ্রিন, পিংক)

সাদা, অফ হোয়াইট, হালকা গ্রে, ফ্লোরাল প্রিন্ট

গাঢ় নীল / নেভি ব্লু

সাদা, ক্রিম, লাইট গ্রে, সিলভার

ডার্ক গ্রিন

অফ হোয়াইট, বেইজ, গোল্ডেন, হালকা প্যাস্টেল পিংক

হালকা ইয়োলো / মেরুন

ক্রিম, অফ হোয়াইট, ব্রাউন, স্যান্ড কালার

লাইট ল্যাভেন্ডার / পার্পল

সাদা, লিলাক, হালকা পিংক, প্যাস্টেল ব্লু

গাঢ় বাদামি / চকোলেট কালার

ক্রিম, অফ হোয়াইট, স্যান্ড, গোল্ডেন

২. পর্দার মাপ (দৈর্ঘ্য-প্রস্থ)

অনেক সময় দেখা গেছে, পর্দা কিনে আনার পর জানালার মাপের সাথে মিলছে না। তাই আগে জানালার Height & Width সঠিকভাবে মেপে নিন।

সাধারণত বাজারের পর্দাগুলোর লম্বা ৭ ফিট হয়ে থাকে। যেগুলো একইসাথে যে কোন দরজা-জানালার সাথে ফিট হয়ে যায়।

বর্তমানে সিলিং টাচ ও ফ্লোর-টাচ লম্বা পর্দা এখন ট্রেন্ডি।তবে ফ্লোর থেকে ১-২ ইঞ্চি ওপরে পর্দা (Curtain) রাখাই বেটার। এতে ময়লা জমে না, দেখতে স্মার্টও লাগে।

৩. পর্দা ব্যবহারের উদ্দেশ্য

আপনি যদি চান রুমে আলো-বাতাস বেশি ঢুকুক, তাহলে হালকা ফ্যাব্রিকের পর্দা নিতে হবে। এই পর্দাগুলো পাতলা হয়ে থাকে যার ফলে জানালা দিয়ে আলো বাতাস প্রবেশ করতে পারে।

আবার যদি রুমের প্রাইভেসি চান বা জানালা দিয়ে রোদ যেন প্রবেশ না করে, সেক্ষেত্রে ব্ল্যাক আউট পর্দা বা ভারী পর্দা ব্যবহার করতে হবে।

ব্ল্যাক আউট পর্দা
ব্ল্যাক আউট পর্দা

৪. রুমের সাইজ অনুসারে পর্দার ডিজাইন

ছোট ঘরের জন্য হালকা রঙ এবং সিম্পল ডিজাইনের পর্দা বেছে নিন। বড় বড় প্রিন্ট বা খুব বেশি কারুকাজ ছোট রুমে অগোছালো দেখাতে পারে। আবার বড় ঘরের জন্য Rich টেক্সচার বা ফ্লোরাল ডিজাইনের Curtain খুব সুন্দর লাগে।

৫. পর্দার ফাংশনালিটি দেখুন

দরজার পর্দা শুধু সাজানোর জন্যই নয়, এটি Privacy বা Dust Protection এর কাজও করে। তাই দরজার পর্দা হালকা ফ্যাব্রিকের হলে সুবিধা হয় চলাফেরায়। আবার ব্যালকনি বা বারান্দার দরজার জন্য একটু ভারি ফ্যাব্রিক Curtain নিতে পারেন, যাতে বাতাসে খুব বেশি উড়ে না যায়।

৬. ড্রয়িং, ডাইনিং এর জন্য হালকা পর্দা

ঘরে ঢুকলেই সবার নজর সবচেয়ে আগে পড়ে ড্রয়িং রুমে, তাই এই জায়গার পর্দা বাছাইয়ে একটু স্পেশাল কেয়ার নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। ড্রয়িং রুমের জন্য আপনি গর্জিয়াস লুকের নেটের উপর কাজ করা পর্দা বা ডাবল লেয়ারের পর্দা নিতে পারেন।

ড্রয়িং রুমের পর্দার ডিজাইন

যদি আপনার ড্রয়িং আর ডাইনিং রুম আলাদা না হয়ে একসাথে হয়, সেক্ষেত্রে মাঝখানে পার্টিশন হিসেবে স্বচ্ছ নেট Curtain ব্যবহার করতে পারেন। এতে আলাদা ঘরের ফিল আসবে, আবার আলো-বাতাসের চলাচলেও কোনো বাঁধা আসবে না। প্রাইভেসিও বজায় থাকবে কিন্তু জায়গা ছোট দেখাবে না।

রুম ডিভাইডার পর্দা
রুম ডিভাইডার পর্দা

বিশেষ করে এখনকার দিনে ডাবল লেয়ারের নেটের পর্দা বেশ ট্রেন্ডি হয়ে উঠেছে, কারণ এতে ঘরের সৌন্দর্য অনেক বেশি ফুটে ওঠে।

ড্রয়িং রুমের পর্দার কালার বাছাই করার সময় কুশন, সোফা, ডিভান এগুলোর রঙের সাথে মিলিয়ে নিতে ভুলবেন না। কালার কম্বিনেশন মিল রাখতে হবে, তাহলে ঘর দেখতে হবে আরও স্টাইলিশ আর ক্ল্যাসি।

৭. নিজের চাহিদা ও পছন্দমত কাস্টমাইজড পর্দা তৈরি করুন

এখন অনেক জায়গায় পর্দার দোকানগুলোতে নিজেদের পছন্দমত সাইজ, কালার ও ডিজাইন দিয়ে পর্দা তৈরি করে নেয়া যায়। আপনি চাইলে নিজের পছন্দের কাপড় কিনে টেইলর দিয়ে পর্দা সেলাই করে নিতে পারেন, যেখানে ডিজাইন, ফিনিশিং, সাইজ সব কিছু আপনার মন মত করে নিতে পারছেন।

অনেকেই দুই পাশে ডিজাইন করা প্রিন্টেড পর্দা রাখছেন আর মাঝে একরঙা সিম্পল পর্দা। আবার বিভিন্ন রংয়ের শেডিং স্টাইলের পর্দাও এখন বেশ জনপ্রিয়, যেখানে এক রঙ থেকে আরেক রঙে সুন্দরভাবে ট্রানজিশন হয়।

এছাড়া অনেকে একরঙা পর্দার উপর বিভিন্ন ডিজাইনের কুশিকাটার কাজ বা দেশীয় কারুকাজ অ্যাড করে নিচ্ছেন। এতে ঘরে একটা স্টাইলিশ ভাইব তৈরি হয়।

এজন্য আপনি বিভিন্ন পর্দার ডিজাইন দেখতে পারেন, অথবা গুগলে পর্দার ডিজাইন সার্চ করে আইডিয়া নিতে পারেন।

৮. ডিজাইনারের পরামর্শ

যদি আপনি ঘর সাজানোর ক্ষেত্রে খুব সিরিয়াস হন বা কোনা ইনটেরিয়র ডিজাইনার দিয়ে নতুন ঘর সাজাতে যাচ্ছেন সেক্ষেত্রে ডিজাইনারের পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন।

শেষকথা

প্রতিদিনের কর্মব্যস্ততা শেষে ঘরই আমাদের একমাত্র আশ্রয়স্থল। ঘরে একটি সুন্দর পর্দা, আপনার ঘরের সৌন্দর্য আর আরামের অনুভূতিকে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিতে পারে।

এই ব্লগ থেকে যদি পর্দা বাছাইয়ে আপনার হেল্প হয়, তাহলে সেটাই আমাদের প্রাপ্তি। ঘর সাজান নিজের স্টাইলে, নিজের মনের মতো করে।

ঘর সাজানোর আরও জিনিসপত্র সম্পর্কে জানতে দেখুন – ঘর সাজানোর টুকিটাকি

পর্দা নিয়ে আপনার মতামত ও পরামর্শ অবশ্যই কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না।

Similar Posts

মন্তব্য করুন