বেবি টিয়ার্স গাছের যত্ন নিবেন যেভাবে 

খুবই ছোট ছোট পাতার একটি আকর্ষণীয় ইনডোর প্লান্ট হচ্ছে বেবি টিয়ার্স (Baby Tears)। জানুন বেবি টিয়ার্স গাছের যত্ন নিয়ে কিছু টিপস, কিভাবে গাছকে করে তুলেবেন আরও আকর্ষণীয় ও প্রাণবন্ত।

বেবি টিয়ার্স গাছের ছবি

বেবি টিয়ার্স (Baby Tears) গাছ ছোট ছোট নরম পাতার জন্য পরিচিত, যা একে মোহনীয় ও সুন্দর করে তোলে। এটি প্রধানত ঘরের ভেতর রাখার জন্য আদর্শ, কারণ এটি কম আলোতেও ভালোভাবে বেড়ে ওঠে। অনেকেই বেবি টিয়ার্স গাছকে টেরারিয়াম, হ্যাংগিং বাস্কেট বা টেবিলের শোভা বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করেন।

যদি সঠিকভাবে যত্ন নেওয়া হয়, তবে এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং গাছের পাতা মাটির উপর একগাল সবুজ কার্পেটের মতো ঢেকে দেয়।

আজ আমরা আলোচনা করব কীভাবে আপনি সহজেই বেবি টিয়ার্স গাছের যত্ন নিতে পারেন।

বেবি টিয়ার্স প্লান্ট (Baby Tears)

বেবি টিয়ার্সের বৈজ্ঞানিক নাম Soleirolia soleirolii। এটি মূলত ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে জন্মে, তবে বর্তমানে এটি সারা বিশ্বেই জনপ্রিয়। ছোট ছোট গোলাকার সবুজ পাতা এবং সূক্ষ্ম কান্ডের কারণে এটি অনেকেই “সবুজ কার্পেট প্ল্যান্ট” নামেও চেনেন।

বেবি টিয়ার্স এক প্রকার ছোট পাতা ও লতানো গাছ, যা মূলত ঘরের শোভা বাড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। গাছটির নামের সঙ্গে “টিয়ার্স” বা “অশ্রু” শব্দটি থাকলেও, এটি তার ছোট ছোট গোলাকৃতি পাতার জন্য পরিচিত, যা জলের ফোঁটার মতো দেখায়।

বেবি টিয়ার্স সাধারণত মাটিতে বিছিয়ে পড়ে বা ঝুলন্ত পাত্রে নিচের দিকে ঝুলে পড়ে থাকে, যা একে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। গাছটি নরম ও স্যাঁতসেঁতে জায়গায় ভাল জন্মায়।

বেবি টিয়ার্স প্লান্ট
বেবি টিয়ার্স প্লান্ট

বেবি টিয়ার্স ফুল

এই গাছে ক্ষুদ্রাকৃতির সাদা বা সবুজাভ ফুল ফোটে, তবে সেগুলো খুব সাধারণ এবং চোখে পড়ার মতো নয়। বেবি টিয়ার্স ফুল গাছের ফুল সাধারণত গ্রীষ্মকালে ফুটলেও, এটি মূলত পাতার সৌন্দর্যের জন্য জনপ্রিয়।

কেন ঘরে বেবি টিয়ার্স গাছ রাখবেন?

বেবি টিয়ার্স গাছ দেখতে আকর্ষণীয় নরম পাতার কারণে এটি আপনার ঘরের শোভা বাড়াবে। এই গাছটির জন্য  বেশি যত্নের প্রয়োজন নেই, কিন্তু একটু মনোযোগ দিলেই গাছটি সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠে।

বেবি টিয়ার্স গাছ বাতাসের আর্দ্রতা বাড়াতে সাহায্য করে, যা আপনার ঘরের পরিবেশের জন্য ভালো।
এটি এমন একটি গাছ যা ঘরে, সটেরারিয়াম বা কাঁচের বক্সে রাখলে অসাধারণ লাগে।

বেবি টিয়ার্স গাছের যত্ন নিবেন যেভাবে?

বেবি টিয়ার্স গাছ পরোক্ষ আলো, স্যাঁতসেঁতে মাটি ও আর্দ্রতা পছন্দ করে। নিয়মিত পানি দিলে ও মাঝে মাঝে ছাঁটাই করলে গাছ সুন্দর ও সতেজ থাকে। ইনডোর বেবি টিয়ার্স গাছের যত্ন নিয়ে নিচের টিপসগুলো দেখুন।

১. সঠিক আলো নির্বাচন করুন

বেবি টিয়ার্স গাছের জন্য উজ্জ্বল, তবে সরাসরি সূর্যের আলো নয়, এমন স্থান আদর্শ। যদি এটি বেশি রোদ পায়, তাহলে পাতাগুলো ঝলসে যেতে পারে। তবে খুব কম আলো হলে গাছের বৃদ্ধি কমে যাবে।

বেবি টিয়ার্স গাছটি আপনার ঘরের পূর্ব বা পশ্চিমমুখী জানালার কাছে রাখুন। অতিরিক্ত সূর্যের আলো পড়লে পাতাগুলো হলদেটে হয়ে যেতে পারে, তাই হালকা ছায়াযুক্ত স্থানে রাখুন। আপনি LED লাইট ব্যবহার করতে পারেন যদি পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক আলো না থাকে।

২. পানি দেওয়ার নিয়ম

বেবি টিয়ার্স গাছ মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখতে ভালোবাসে, তবে অতিরিক্ত পানি দিলে শিকড় পচে যেতে পারে। তাই মাটি সবসময় হালকা ভেজা রাখুন, তবে পানিতে ডুবিয়ে রাখবেন না।

আপনি বেবি টিয়ার্স গাছে গরমকালে প্রতিদিন বা একদিন পর পর পানি দিবেন। তবে শীতকালে পানি কম দিন, সপ্তাহে ২-৩ বার পানি দিলেই হবে। আপনি গাছের গোড়ায় সরাসরি পানি দিবেন, তবে পাতার উপর বেশি পানি দিবেন না। পাতার উপর বেশি পানি দিলে পচন ধরতে পারে।

আরও পড়তে পারেন:

৩. সঠিক মাটি নির্বাচন করুন

বেবি টিয়ার্স গাছের জন্য হালকা ও পানি নিষ্কাশনের উপযোগী মাটি দরকার। ভারী মাটি হলে শিকড় শ্বাস নিতে পারবে না, ফলে গাছ মরে যেতে পারে।

আপনি ৫০% পটিং মাটি + ২৫% পার্লাইট + ২৫% পিট মস মিশিয়ে সঠিক মাটি নির্বাচন করতে পারবেন। এর সাথে কোকোপিট ও বালি মিশিয়ে নিতে পারেন, যা পানি নিষ্কাশন ভালো করবে।

৪. তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ

বেবি টিয়ার্স গাছ উষ্ণ ও আর্দ্র পরিবেশে ভালোভাবে বেড়ে ওঠে। বেবি টিয়ার্স গাছের জন্য ১৮-২৫°C তাপমাত্রা প্রয়োজন। তবে শীতকালে ১০°C এর কম হলে গাছ দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। বেবি টিয়ার্স গাছে আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্য গাছের চারপাশে হালকা পানি স্প্রে করুন।

টেরারিয়ামে বা বাথরুমের জানালার পাশে রাখলে আর্দ্রতা বেশি থাকবে। শুষ্ক আবহাওয়ায় একটি ছোট পাত্রে পানি রেখে দিন, যা বাতাসের আর্দ্রতা বাড়াবে।

৫. সার প্রয়োগের নিয়ম

বেবি টিয়ার্স গাছে খুব বেশি সার প্রয়োজন হয় না, তবে মাঝেমধ্যে একটু পুষ্টি দিলে আরও সুন্দরভাবে গাছ বেড়ে উঠবে। আপনি বেবি টিয়ার্স গাছে তরল সার (Diluted liquid fertilizer) প্রতি মাসে ১-২ বার দিতে পারেন।

আপনি জৈব সার বা কম্পোস্টও ব্যবহার করতে পারবেন, তবে বেশি মাত্রায় নয়। আপনাকে বেবি টিয়ার্স গাছে শীতকালে সার দেওয়া বন্ধ রাখতে হবে কারণ তখন গাছের বৃদ্ধি কমে যায়।

৬. ছাঁটাই ও প্রতিস্থাপন

বেবি টিয়ার্স গাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায় ও ছড়িয়ে পড়ে, তাই মাঝে মাঝে ছাঁটাই করা দরকার। এটির অতিরিক্ত লম্বা ডাল কেটে দিলে গাছের আকৃতি সুন্দর থাকবে। নতুন ডাল বের হওয়ার সুযোগ পাবে। বেশি ঘন হয়ে গেলে বাতাস চলাচল কমে যায়, তাই মাঝে মাঝে পাতলা করতে হবে।

আপনি গাছটিকে প্রতিস্থাপন করতে চাইলে প্রতি বছর বা ৬ মাস পরপর গাছটি একটু বড় টবে স্থানান্তর করুন। এ ছাড়া নতুন মাটি দিয়ে প্রতিস্থাপন করলে গাছ আরও ভালোভাবে বেড়ে উঠবে।

৭. কীটপতঙ্গ ও সমস্যা সমাধান

বেবি টিয়ার্স গাছ সাধারণত খুব বেশি রোগে আক্রান্ত হয় না, তবে মাঝে মাঝে পোকামাকড়ের সমস্যা দেখা দিতে পারে। বেবি টিয়ার্স গাছের সাধারণ সমস্যা ও প্রতিকার করতে চাইলে এসব বিষয়গুলো আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে।

গাছের পাতা হলুদ হয়ে গেলে পানি বেশি দিচ্ছেন কিনা পরীক্ষা করুন। বেবি টিয়ার্স গাছে পোকা আক্রমণ করলে নিম তেল বা সাবান পানি স্প্রে করতে পারেন। গাছ মরে যাচ্ছে তাহলে আপনি আলো, পানি ও মাটির অবস্থা দেখে নিন, প্রয়োজন অনুযায়ী ঠিক করুন।

শেষ কথা

বেবি টিয়ার্স গাছের যত্ন নেওয়া খুব কঠিন নয়, শুধু নিয়ম মেনে পানি, আলো ও তাপমাত্রা বজায় রাখলেই এটি সুন্দরভাবে বেড়ে উঠবে। এটি ছোট হলেও ঘরের সৌন্দর্য অনেক বাড়িয়ে তুলতে পারে।

আপনি যদি এমন একটি গাছ চান যা কম যত্নে সুন্দর দেখাবে, তবে বেবি টিয়ার্স নিঃসন্দেহে ভালো একটা অপশন!

Similar Posts

Leave a Reply