কোন এয়ার কুলার ভালো? এয়ার কুলার কেনার ক্ষেত্রে যা অবশ্যই চেক করবেন

ভাবছেন কোন কোম্পানির এয়ার কুলার ভাল? ভাল এয়ারকুলার নির্ভর করে এর ফিচার ও সুবিধার উপর। দেখুন এয়ার কুলার কিনতে কি কি বিষয় খেয়াল করবেন এবং ভাল একটি কুলার কিনবেন।

কোন এয়ার কুলার ভালো

গরমের দাবদাহে একটু স্বস্তি পাওয়ার জন্য অনেকেই এসির দিকে ঝুঁকছেন, তবে সেটি সবার বাজেটের মধ্যে পড়ে না। তাই বিকল্প হিসেবে এয়ার কুলার বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

এটি কম খরচে এবং সহজেই ব্যবহার করা যায়, ফলে অনেকেই প্রচণ্ড গরমের হাত থেকে বাঁচতে এয়ার কুলার কিনছেন। কিন্তু কোন এয়ার কুলার ভালো? বা এয়ার কুলার কেনার ক্ষেত্রে যা অবশ্যই চেক করবেন – এ বিষয়ে সচেতন না হলে পরে সমস্যা হতে পারে।

অনেকে মনে করেন, এয়ার কুলার এসির মতই ঠান্ডা বাতাস দিবে। আসলে মোটেও তা নয়, এয়ার কুলারে বরফ ও পানি নিয়ে কুলারের বাতাস কিছুটা ঠান্ডা করার প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।

কুলার কেনার আগে, অবশ্যই আপনার জানা উচিত এয়ার কুলার কিভাবে কাজ করে

সঠিক এয়ার কুলার বেছে নেওয়ার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখা জরুরি। আসুন বিস্তারিত জেনে নিই।

এয়ার কুলার কিনতে যা চেক করবেন

১. ঘরের মাপ অনুযায়ী এয়ার কুলার বেছে নিন

এয়ার কুলার কেনার আগে আপনার ঘরের আকারের সঙ্গে মানানসই মডেল নির্বাচন করা জরুরি। যদি কুলারের ক্ষমতা আপনার ঘরের জন্য উপযুক্ত না হয়, তাহলে সেটি কার্যকরভাবে ঠান্ডা করতে পারবে না।

রুম ১৫০-৩০০ স্কয়ার ফিটের মধ্যে হলে পার্সোনাল কুলার সবচেয়ে ভালো অপশন। ছোট বা মাঝারি ঘরের জন্য পার্সোনাল কুলার যথেষ্ট, কিন্তু বড় ঘরের ক্ষেত্রে ডেজার্ট কুলারই সবচেয়ে কার্যকর।

২. ওয়াটার ট্যাঙ্কের ক্ষমতা বিবেচনা করুন

এয়ার কুলারের কর্মক্ষমতা অনেকাংশেই নির্ভর করে ওয়াটার ট্যাঙ্কের ওপর। কারণ পানি শোষণ করেই এটি বাতাসকে ঠান্ডা করে।

  • ছোট ঘরের জন্য: ১৫ লিটারের কুলার যথেষ্ট।
  • মাঝারি ও বড় ঘরের জন্য: ২৫-৩০ লিটারের কুলার ভালো হবে।

যদি ওয়াটার ট্যাঙ্কের ক্ষমতা বেশি হয়, তাহলে বারবার পানি পরিবর্তনের ঝামেলা কম হবে।

৩. আবহাওয়ার সাথে মানানসই কুলার কিনুন

সব ধরনের কুলার সব জায়গায় কার্যকর নয়। আপনার এলাকার আবহাওয়া অনুযায়ী এয়ার কুলার বেছে নিন: শুষ্ক আবহাওয়া (কম আর্দ্রতা থাকলে) ডেজার্ট কুলার সবচেয়ে ভালো কাজ করবে। তবে এটি বড় হলরুম বা বারান্দার জন্য। আর্দ্র আবহাওয়া (বাতাসে বেশি জলীয় বাষ্প থাকলে): পার্সোনাল বা টাওয়ার কুলার বেশি কার্যকর।

৪. কুলারের শব্দ পরীক্ষা করুন

কিছু এয়ার কুলার ব্যবহারের সময় প্রচণ্ড শব্দ করে, যা বিরক্তিকর হতে পারে। তাই কেনার আগে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো চেক করুন:

ফ্যানের স্পিড বাড়ালে কোনো শব্দ হয় কিনা বা কুলারের কম্পন বেশি হচ্ছে কিনা এগুলো চেক করুন। এছাড়া, কুলারের বাতাস কি আসলেই স্বাভাবিকের চেয়ে একটু ঠান্ডা বাতাস দিচ্ছে কিনা চেক করতে পারেন।

৫. অটো ফিল ফাংশন আছে কিনা দেখুন

কুলারের ট্যাংকে বারবার পানি ঢুকাতে গিয়ে বিরক্ত হতে না চাইলে অটো ফিল ফাংশন রয়েছে এমন কুলার কিনুন। এই ফিচার থাকলে, কুলার নিজেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানি ভরে নেবে।

ট্যাঙ্ক শুকিয়ে গেলে মোটরের ক্ষতি হবে না। ব্যবহারের সুবিধা বাড়বে। অটো ফিল ফিচার থাকলে, বারবার পানি এড করার ঝামেলা ছাড়া আরামে ব্যবহার করতে পারবেন।

৬. কুলিং প্যাডের মান কেমন?

কুলিং প্যাড এয়ার কুলারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ভালো মানের কুলিং প্যাড ঠান্ডা বাতাস দীর্ঘক্ষণ ধরে রাখতে সাহায্য করে।

বাজারে কয়েক ধরনের কুলিং প্যাড পাওয়া যায়:

  • উল কাঠ (Aspen Pads): এগুলো সস্তা, কিন্তু দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়।
  • হানিকম্ব প্যাড (Honeycomb Pads): দীর্ঘস্থায়ী, বেশি ঠান্ডা রাখতে পারে এবং কম রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয়।

তাই, একটু ভাল ঠান্ডা পেতে হলে আপনাকে হানিকম্ব প্যাড যুক্ত এয়ার কুলার কিনতে হবে।

৭. আইস চেম্বার আছে কিনা চেক করুন

অনেক কুলারে আইস চেম্বার যোগ করা থাকে, যা দ্রুত বাতাস ঠান্ডা করতে সাহায্য করে। যদি আপনি গরমের দিনে আরও বেশি শীতল অনুভূতি চান, তাহলে আইস চেম্বারযুক্ত এয়ার কুলার কিনুন।

এতে বরফ যোগ করলে ঠান্ডা বাতাস আরও কার্যকর হবে। দীর্ঘক্ষণ ধরে কুলিং ইফেক্ট বজায় থাকবে।

৮. বিদ্যুতের খরচ কেমন?

এয়ার কুলার সাধারণত এসির তুলনায় কম বিদ্যুৎ খরচ করে। তবে বিদ্যুৎ বিলের খরচ কম রাখতে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করুন:

  • ইনভার্টার টেকনোলজি যুক্ত কুলার কিনুন, যা বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে।
  • কম পাওয়ার কনজাম্পশন হয় এমন মডেল নিন।
  • বিদ্যুৎ গেলে যেন ব্যাকআপে চালানো যায়, এমন কুলার কিনুন।

কম বিদ্যুৎ খরচ করে এমন কুলার কিনলে দীর্ঘমেয়াদে খরচ বাঁচবে।

এয়ার কুলার কোথায় রাখবেন?

কুলার কোন ধরনের তার উপর নির্ভর করবে আপনি এটি কোথায় বসাবেন। ডেজার্ট কুলার হচ্ছে বড় হল রুম, ঘরের বাইরে বা বারান্দায় রাখার জন্য এই কুলার, কারণ এটি বড় স্পেস কভার করে।

আবার, পার্সোনাল ও টাওয়ার কুলার ঘরের ভেতর আপনার সুবিধা অনুযায়ী যে কোনো স্থানে রাখতে পারবেন।

যদি সঠিক জায়গায় কুলার না রাখেন, তাহলে কুলার ব্যবহারের ভাল আউটপুট অর্থাৎ পর্যাপ্ত শীতল বাতাস পাওয়া যাবে না।

শেষ কথা

এয়ার কুলার কেনার সময় যদি উপরের বিষয়গুলো চেক করে কিনে থাকেন, আপনি হয়তো ভালো মানের একটি কুলার কিনতে পারবেন। এবং এর থেকে সুবিধাও উপভোগ করতে পারবেন।

কোন এয়ার কুলার ভালো? বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কুলার পাওয়া যায় যেমন, Walton, Toshiba, Miyako সহ অন্যান্য। কেনার আগে এসব বিষয় যাচাই-বাছাই করে নেওয়া ভালো।

Similar Posts

Leave a Reply