সঠিকভাবে ও নিরাপদে প্রেসার কুকার ব্যবহারের নিয়ম

সাবধানতার সাথে সঠিকভাবে প্রেসার কুকার ব্যবহার না করলে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। জানুন সঠিকভাবে ও নিরাপদে প্রেসার কুকার ব্যবহারের নিয়ম।

প্রেসার কুকার ব্যবহারের নিয়ম

রান্নার কাজে প্রেসার কুকার একটি অতি প্রয়োজনীয় জিনিস। রান্নাকে সহজ ও দ্রুত করতে প্রেসার কুকারে জুড়ি মেলা ভার। তবে প্রেসার কুকার ব্যবহারের নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম রয়েছে, যা মেনে চললে রান্না আরো সহজ এবং নিরাপদ হবে।

এই আর্টিকেলটিতে আমরা প্রেসার কুকার ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি, এর সুবিধা এবং প্রেসার কুকারে কি কি রান্না করা যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

প্রেসার কুকার ব্যবহারের নিয়ম

প্রেসার কুকারে রান্না করার সময় সঠিক পরিমাণে খাদ্য উপকরণ ও পানি দিন, ভালো করে ঢাকনা বন্ধ করুন। প্রথমে জোরে চুলার আঁচ দিন, তারপর সিটি বাজার পরে আঁচ কমিয়ে দিয়ে নির্দিষ্ট সময় ধরে রান্না করুন। চুলা বন্ধ করে সিটি উঁচু করে বাষ্প বের করে নিন।

ধাপ ১: সঠিক পরিমাণে উপকরণ দিন

প্রেসার কুকারে যেকোনো খাবার সিদ্ধ হতে দিলে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে তা যেন প্রেসার কুকারে দুই তৃতীয়াংশের বেশি না হয়। ধরুন, আপনার পেশার কুকারের মোট ধারণ ক্ষমতা ৩ লিটার। তাহলে আপনি সর্বোচ্চ ২ লিটার পরিমাণ খাবার দিতে পারবেন।

সতর্কতা: প্রেশার কুকারে রান্নার উপকরণ দেয়ার সময় খেয়াল রাখবেন ভেতরে ৩ ভাগের ১ অংশ যেন ফাঁকা থাকে। ফাঁকা অংশ না থাকলে কুকারের ভেতরের বাষ্পের অতিরিক্ত চাপে কুকার ফেটে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

কুকারে সব সময় নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি দিন। প্রেসার কুকারে পানি শোষণ হয়না বললেই চলে, তাই অতিরিক্ত পানি দেয়ার প্রয়োজন নাই।

ধাপ ২: ঢাকনা ঠিকভাবে বন্ধ করে চুলায় দিন

প্রেসার কুকারের ঢাকনাতে যে রাবারের রিং অর্থাৎ গ্যাসকেট থাকে তা ভালোভাবে আটকে, ঢাকনাটি শক্ত করে বন্ধ করে, চুলায় খাবার চাপাতে হবে। প্রেসার কুকারের ক্ষেত্রে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে- ভালোভাবে ঢাকনা লাগানো। ঢাকনা ঠিকভাবে না বন্ধ হলে চাপ সঠিকভাবে তৈরি হবে না এবং বিভিন্ন সমস্যা হবে।

ধাপ ৩: প্রেসার কুকারের সিটির আওয়াজ খেয়াল করুন

রান্নার বিভিন্ন উপকরণ ও ধরন ভেদে প্রেসার কুকারে রান্নার সময় নির্ধারণ করতে হবে। এছাড়া সিটির সংখ্যা দিয়েও আপনি রান্নার সময় নির্ধারণ করতে পারেন।

  • মুগ/মসুর ডাল রান্নায় ২-৩ সিটি;
  • ছোলা রান্নায় ৭-৮ ঘণ্টা ভিজিয়ে, ৩-৪ সিটি;
  • মুরগীর মাংস রান্নায় ২-৩ সিটি (মাংসের ধরনভেদে), দেশি মুরগি হলে আরো বেশি ৫-৬ সিটি;
  • গরু বা খাসির মাংস রান্নায় ৫-৬ সিটি।

ভাত ও ডালের জন্য চাল ও ডালের ধরন অনুযায়ী সিটির সংখ্যা পরিবর্তিত হতে পারে। মাংসের ক্ষেত্রে মাংসের ধরন বুঝে রান্না সময় নির্ধারণ করলেই ভাল।

আরও পড়ুন:

ধাপ ৪: প্রেসার কুকার খুলে নিন

রান্না শেষ হলে, প্রেসার কুকার ঠান্ডা করে ভেতরের বাষ্প তরল হয়ে গেলে ঢাকনা খোলা উচিত। তাছাড়া, দ্রুত খুলতে চাইলে চামচ বা খুন্তি দিয়ে প্রেসার নবটি উঠিয়ে বাষ্প বের করে, তারপর ঢাকনা খুলতে হবে।

সতর্কতা: ভেতরের বাষ্প বের না করলে কুকারের মধ্যে প্রচন্ড চাপের কারণে, ঢাকনা খোলার সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

ধাপ ৫: কুকার পরিষ্কার করুন

প্রতিদিন রান্নার পর প্রেসার কুকার পরিষ্কারের সাথে সাথে কুকারের গ্যাসকেট এবং সিটি ভালোভাবে পরিষ্কার করার চেষ্টা করুন। সাধারণ ডিস ওয়াশিং লিকুইড দিয়েই পরিষ্কার করা যায় পরিষ্কার করার জন্য সাদা ভিনেগার এবং পানি ব্যবহার করতে পারেন। কঠিন দাগ তোলার জন্য, সাদা ভিনেগার ও পানি ব্যবহার করতে পারেন।

সিটিতে অনেক সময় ময়লা জমে কালো হয়ে যায় এবং যা গ্যাস বের হতে বাধা দেয়। যার ফলে সিটি সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। তাই নিয়মিত ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করার চেষ্টা করতে হবে।

প্রেসার কুকারের ঢাকনার রাবারের রিং অর্থাৎ গ্যাস কিট লুজ হয়ে গেলে দ্রুত নতুন গ্যাস কেট কিনে লাগিয়ে ফেলুন। কেননা নষ্ট হয়ে যাওয়া গ্যাসকেট ব্যবহার করলে রান্নার সময় দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকবে।

আরও দেখুন

প্রেসার কুকারে ডাল রান্নার নিয়ম

সাধারণত আমরা ডাল রান্নার ক্ষেত্রে প্রেসার কুকারের বেশি ব্যবহার করে থাকি। তবে ডাল রান্নার ক্ষেত্রে প্রেসার কুকারে সব থেকে বড় ঝামেলা হচ্ছে- প্রেসার কুকারের সিটির জায়গা থেকে ডাল উপচে পড়ে।

তবে এটির একটি সহজ সমাধান রয়েছে। ডালের সাথে অল্প পরিমাণে তেল, হলুদ মিশিয়ে তারপর পানি দিয়ে চাপাতে হবে। প্রয়োজনে প্রেসার কুকারের ঢাকনার ভিতর দিকে অল্প পরিমাণে তেল ব্রাশ করে দিতে পারেন। তাহলে ডাল আর উপচে পড়বে না।

ছোলা বা কাবলি বুট জাতীয় ডাল প্রেসার কুকারে সিদ্ধ করার আগে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখবেন।
প্রেসার কুকারে গরুর মাংস রান্না করার নিয়ম এখন অনেক সহজ হয়ে গেছে।

প্রেসার কুকারে কি কি রান্না করা যায়

প্রেসার কুকারে ডাল, ভাত, আলু, মাংস, মুরগি, বিরিয়ানি, কেক, পুডিং, চটপটি, বুটের ডালের হালুয়া, ছোলা, সবজি সহ নানা ধরনের খাবার খুব সহজে রান্না করা যায়।

সবুজ শাকসবজি জাতীয় খাবার প্রেসার কুকারে না দেওয়াই ভালো। কেননা এতে করে উচ্চচাপে সবুজ সবজির পুষ্টির গুণগত মান অনেক কমে যেতে পারে।

প্রেসার কুকারে রান্নার সুবিধা

প্রেসার কুকার রান্নাকে সহজ, দ্রুত এবং আরামদায়ক করে তোলে। এছাড়াও, খাবারের পুষ্টিগুণ বজায় রাখে এবং খাবার কে আরো সুস্বাদু করে তোলে।

প্রেসার কুকারে রান্নার সুবিধাগুলো হচ্ছে:

  • দ্রুত রান্না হয় রান্নার সময় অনেক বেঁচে যায়
  • জ্বালানি খরচ অর্থাৎ গ্যাস খরচ কম হয়
  • খাবার দ্রুত রান্না হওয়ায় খাবারের পুষ্টিগুণ বেশিরভাগ বজায় থাকে।
  • কুকারে রান্না করা মাংস, ডাল ইত্যাদি খুব নরম হয়ে যায়, যা হজমে সহায়ক।
  • বিভিন্ন ধরনের খাবার রান্না করা যায়
  • সহজে পরিষ্কার করা যায়

FAQs

প্রেসার কুকার হচ্ছে একটি সিল করা পাত্র। পাত্রে তাপ দেয়ার ফলে ভেতরের উপকরণ ফুটে বাষ্প উৎপন্ন হয় কিন্তু বাষ্প বের হতে পারে না। এতে কুকারের ভেতর গরম 100ºC বাষ্পের প্রচন্ড চাপ তৈরি হয় এবং ভেতরের তাপমাত্রাও 100ºC ছাড়িয়ে যায়।

প্রেসার কুকারের জন্য অ্যালুমিনিয়ামের চেয়ে স্টেইনলেস স্টীল ভাল।

শেষকথা

আপনি যদি নিরাপদে এবং স্বচ্ছন্দে প্রেসার কুকার ব্যবহার করতে চান এবং সিটির উচ্চ শব্দ অপছন্দ করেন, তাহলে ৫,০০০ টাকার মধ্যে ভালো মানের একটি আধুনিক প্রেসার কুকার কিনতে পারেন। এই ধরনের কুকার গুলো সাধারণত অনেক বেশি নিরাপদ এবং সহজে ব্যবহার করা যায়।

আশা করি, আজকের এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে প্রেসার কুকার ব্যবহার সংক্রান্ত অনেক গুলো নিয়ম জানতে পেরেছেন। এই নিয়মগুলো আপনাদের প্রতিদিনের প্রেসার কুকার ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনেক কাজে দিবে।

Similar Posts

Leave a Reply