ভিনেগার কি ও ভিনেগার কি কাজে ব্যবহার হয়
ভিনেগার বা সিরকা শুধুই রান্নার উপকরণ হিসেবে নয় বরং স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ও গৃহস্থালী বিভিন্ন কাজেও ব্যবহার হয়। ভিনেগারের বিভিন্ন ব্যবহার নিয়ে জানুন বিস্তারিত।
মূলত রান্নার কাজে ভিনেগার ব্যবহার হলেও এর ব্যবহার শুধুমাত্র রান্না ঘরের মধ্যে সেরা মধ্য সীমাবদ্ধ নয়। প্রাত্যহিক জীবনে বিভিন্ন কাজে ভিনেগারের ব্যবহার লক্ষ করা যায়। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজে, দুর্গন্ধ দূর করতে, এমনকি রূপচর্চার কাজেও ভিনেগারের ব্যবহার হয়ে থাকে।
কোন কোন কাজে ভিনেগারের ব্যবহার করা হয় তা জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ভিনেগার কি?
ভিনেগারকে আমরা অনেকেই সিরকা নামে চিনে থাকি। ভিনেগারের রাসায়নিক নাম হল এসিটিক অ্যাসিড যা সাধারণত তরল আকারে পাওয়া যায়। ভিনেগারের সাদ তিক্ত ও টক স্বাদ এবং এর তীব্র গন্ধ থাকে। চিনি বা ইথানলকে গাজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এসিটিক এসিডে পরিণত করা হয়।
ভিনেগার কত প্রকার
ভিনেগার কয়েক প্রকারের হয়ে থাকে। যেমন –
- হোয়াইট ভিনেগার;
- আপেল সিডার ভিনেগার;
- কোকোনাট ভিনেগার;
- বালসামিক ভিনেগার;
- রাইস ভিনেগার ইত্যাদি।
তবে বাংলাদেশে হোয়াইট ভিনেগার এবং আপেল সাইডার ভিনেগারের প্রচলন বেশি। সব থেকে সাধারণ সহজলভ্য ভিনেগার হলো হোয়াইট ভিনেগার। আপেল সিডার ভিনেগার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী বলে বিবেচিত।
ভিনেগার যেসব কাজে ব্যবহার করা হয়
বিভিন্ন ধরনের রান্নায়, আচার সংরক্ষণে, সস তৈরি, ত্বক ও চুলের যত্নে, দুর্গন্ধ দূর করতে, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজে ভিনেগারের ব্যাপক ব্যবহার হয়ে থাকে।
১. রান্নার কাজে ভিনেগারের ব্যবহার
মাছ-মাংসের গন্ধ দূর করতে ভিনেগার
কাঁচা মাছ বা মাংস থেকে আঁশটে গন্ধ দূর করার জন্য ভিনেগার দিয়ে মাছ মাংস ম্যারিনেট করে রাখা হয়। এটি খাবার দ্রুত সিদ্ধ করতেও সহায়তা করে।
আচার সংরক্ষণ করতে ভিনেগার
দীর্ঘ দিন ধরে আচার ভালোভাবে সংরক্ষণের জন্য ভিনেগারের ব্যবহার হয়ে থাকে। ভিনেগার আচারে ঈস্ট বা ছত্রাক জমতে দেয় না।
রান্নায় স্বাদ বাড়াতে ভিনেগার
খাবারের স্বাদ বাড়াতে ভিনেগার খুব ভালো কাজ করে।
- সালাদ, সস, মাছ, সবজি ও আচার তৈরি, ম্যারিনেট ইত্যাদিতে ভিনেগার ব্যবহার করা হয়।
- অনেক সময় তরকারিতে ঝাল বেশি হয়ে যায়। এক্ষেত্রে সামান্য ভিনেগার দিলে ঝাল কমে যাবে।
- ভিনেগারে থাকা জৈব এসিড খাবারের বিভিন্ন উপাদানের রং নষ্ট হতে দেয় না। যার ফলে রান্না করা খাবার অনেক উজ্জ্বল দেখায়।
২. পরিষ্কারের কাজে ভিনেগারের ব্যবহার
ভিনেগার একটি প্রাকৃতিক পরিষ্কারক হিসাবে কাজ করে থাকে। বিভিন্ন কঠিন দাগ ভিনেগারের সাহায্যে সহজে পরিষ্কার করা সম্ভব।
কাঁচ পরিষ্কার করতে ভিনেগার
কাঁচের জিনিস পরিষ্কার করতে ভিনেগার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এটি দিয়ে ধুলোবালি খুব সহজে পরিষ্কার হয়। ডাইনিং টেবিলের কাঁচ অথবা থাই এর জানালা পরিষ্কারে ভিনেগার দারুন কাজ করে। এক কাপ পানিতে এক চামচ সাদা ভিনেগার মিশিয়ে কাঁচের জিনিস গুলো মুছে দিলে একদম নতুনের মত হয়ে যাবে।
মেঝে পরিষ্কারে ভিনেগার
টাইলসের মেঝে পরিষ্কারে ভিনেগার মিশ্রিত পানি দিয়ে ঘর মুছতে পারেন। টাইলস এর বিভিন্ন ধরনের দাগ ভিনেগারের মাধ্যমে সহজে দূর করা যায়।
দেয়াল থেকে দাগ তুলতে
বাসায় দেয়ালে বলপয়েন্টের দাগ লাগলে ভিনেগার নিয়ে দাগের উপর লাগান। তারপর কাপড় কিংবা স্পঞ্জ দিয়ে ঘষুন তাহলে দাগ চলে যাবে।
মরিচা দূর করতে ভিনেগার
কাঁচিতে মরিচা পড়ে গেলে সাদা ভিনেগারে ভেজানো কাপড় দিয়ে কয়েক বার মুছে নিয়ে তারপর শুকনা নরম কাপড় দিয়ে মুছে ফেলুন। তাহলে ঝকঝকে হয়ে যাবে।
ফ্রিজের দুর্গন্ধ দূর করতে
এক কাপ পানিতে এক চামচ ভিনেগার মিশেয়ে তা দিয়ে ফ্রিজের ভেতর এবং বাইরের অংশ মুছলে ফ্রিজের দুর্গন্ধ দূর হবে।
মাইক্রো ওভেনের দুর্গন্ধ দূর
এক কাপ পানিতে দুই চামচ ভিনেগার মিশিয়ে কাপটি মাইক্রোওভেনের ভেতরে রেখে দুই থেকে তিন মিনিট চালু করে রাখলে মাইক্রোওভেনের ভেতরের গন্ধ দূর হয়ে যাবে। এরপর সেই পানি দিয়ে মাইক্রোওভেন মুছে নিতে পারেন।
৩. সুস্থ থাকতে ভিনেগার ব্যবহার
অ্যাপল সিডার ভিনেগার দেখতে অনেকটা মধুর মত এবং হালকা টক গন্ধের হয়ে থাকে। এটি স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। ল্যাবএইড হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ সালমা পারভিন জানান, দৈনিক ১-২ চামচ অ্যাপল সিডার ভিনেগার শুধু ওজন কমায় না, শরীরে মেটাবলিজম বাড়ায় ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের জোগান দেয়।
এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ (ফাইবার) আছে, যা কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সহায়ক। টাইপ টু ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমিয়ে শরীরে হৃদ্রোগের আশঙ্কা কমায়।
- অ্যাপল সিডার ভিনেগার খেলে তা ওজন কমাতে সাহায্য করে। বারবার ক্ষুধা লাগার প্রবণতা কমাতে কাজে আসে।
- হজমে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
- শরীরের কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।
- কিডনি রোগী, অন্তঃসত্ত্বা মা এবং শিশুকে দুধ খাওয়ান এমন মায়ের জন্য অ্যাপল সিডার ভিনেগার খাওয়া নিষেধ।
৪. ত্বকের যত্নে ভিনেগার ব্যবহার
সাধারণত আমাদের ত্বকে এক ধরনের অ্যাসিডের প্রলেপ থাকে, যা ক্ষতিকর জীবাণুকে ত্বকে প্রবেশ করতে বাধা দেয়। বিভিন্ন কারণে এই এসিডের পরিমাণ কমে গেলে ত্বকে জীবাণু প্রবেশ করতে বাধা পায় না। ফলে একসময় ত্বকে ব্রণ ও র্যাশের জন্ম হয়, ছত্রাকজনিত ইনফেকশন বাড়ে।
আপেল সিডার ভিনেগারে পানি মিশিয়ে টোনার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এটি ত্বকে উপকারী অ্যাসিডের পরিমাণ ঠিক রাখে, ত্বকের pH লেভেল বজায় রাখে এবং জীবাণু প্রতিরোধে সাহায্য করে। ফলে মুখে ব্রণের সমস্যা হয় না।
৫. চুলের যত্নে ভিনেগার ব্যবহার
চুল পড়া কমাতে, চুল নরম ও উজ্জ্বল করতে, খুশকি ও উকুন দূর করতেও আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার হয়ে থাকে। চুলে শ্যাম্পু করার পর এক মগ পানিতে এক টেবিল চামচ অ্যাপল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে চুল ধুয়ে নিন। এতে করে চুলে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা আসবে। এটি চুলের কন্ডিশনার হিসাবে কাজ করবে।
ভিনেগার চুল পড়া কমায়
চুল পড়া কমাতে এক টেবিল চামচ অ্যাপল সিডার ভিনেগার এর সঙ্গে সমপরিমাণ পানি এবং অ্যালোভেরা জেল এর একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিন। এরপর মাথার ত্বকে ঘষে ঘষে লাগান। মিশ্রণটি ৩০ মিনিট চুলে লাগিয়ে রাখার পর ধুয়ে ফেলুন। এতে করে চুলের ঘনত্ব বাড়বে, চুল পড়াও কমবে।
ভিনেগার নিয়ে সতর্কতা
ভিনেগারের অ্যাসিডিক মাত্রা দেখে ভিনেগার কেনা উচিত। ১০% অ্যাসিটিক অ্যাসিড ভিনেগারের সাধারণ ঘনত্ব। তবে, ভিনেগারের ঘনত্ব বিভিন্ন হতে পারে। ঘনত্ব যত বেশি হয়, ভিনেগারের স্বাদ তত বেশি তীব্র হয়।
ভিনেগার নিয়ে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
শেষ কথা
ভিনেগারের ব্যবহার আমাদের রান্না থেকে শুরু করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা প্রায় সব জায়গায় পরিলক্ষিত হয়। তবে ভিনেগারের অতিরিক্ত ব্যবহার ক্ষতিকর হতে পারে। তাই, ভিনেগার ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী।
আশা করি, এই এ আর্টিকেল এর মাধ্যমে ভিনেগারের ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানতে পেরেছেন।