মানি প্লান্ট গাছের উপকারিতা ও যত্ন
মানিপ্লান্ট গাছ বায়ু শোধনকারী এবং এটি ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। এ গাছের যত্নে পরিমিত পানি, পর্যাপ্ত আলো, জৈব সার দেয়া ও পোকামাকড় থেকে দূরে রাখতে হবে।
মানি প্লান্ট চমৎকার একটি ইনডোর প্লান্ট। মানিপ্লান্ট গাছকে Pothos (পোথোস) বলা হয়ে থাকে। মানিপ্লান্ট গাছের লতানো ডালপালা ঘর ও বারান্দার সৌন্দর্য বহুগুণে বৃদ্ধি করে।
তবে এর সৌন্দর্যের পাশাপাশি, মানি প্লান্টের অনেক উপকারিতা আছে। গাছের সৌন্দর্য ও উপকারিতা ভোগ করতে অবশ্যই মানিপ্লান্ট গাছের যত্ন নিতে হবে।
তাই আজকের ব্লগে মানি প্লান্ট গাছের যত্ন ও উপকারিতা নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শেয়ার করলাম।
মানিপ্লান্ট এর বৈশিষ্ট্য
মানিপ্লান্ট গাছের আকর্ষণীয় পাতা এর প্রধান বৈশিষ্ট্য। এছাড়াও এ গাছের আরো কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
পাতার ধরন: মানি প্লান্ট এর সবুজ পাতা গুলোতে হলুদ বা সাদা রঙের বিচিত্র ছোপ থাকে। এ গাছের পাতা গোলাকার, চ্যাপ্টা এবং মোটা হওয়ায় পাতাগুলো দেখতে অনেকটা মুদ্রার মত। তাই এর নাম মানিপ্লান্ট রাখা হয়েছে।
উচ্চতা: মানিপ্লান্ট একটি লতা প্রজাতির গাছ। লম্বা লম্বা লতাগুলোতে আকর্ষণীয় ও বিচিত্র পাতা মানিপ্লান্ট গাছের প্রধান আকর্ষণ। বাগানে লাগালে এ গাছ সাধারণত ৬০-৬৫ ফুট উচ্চতা পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। কিন্তু টবে লাগালে মানি প্লান্ট গাছ সাধারণত ৫-৬ ফুটের বেশি বাড়তে পারে না।
বৈশিষ্ট্য | মানিপ্লান্ট |
বৃদ্ধির হার | ধীরে ধীরে |
উচ্চতা | টবে ৫-৬ ,বাগানে ৬০-৬৫ ফুট |
আলোর প্রয়োজন | পরোক্ষ সূর্যালোক বা কম আলো |
পানির প্রয়োজন | সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ বার |
তাপমাত্রা | বিভিন্ন ধরনের তাপমাত্রায় খাপ খায় |
বায়ু পরিশোধন | বায়ু পরিশোধনে বিশেষ ভূমিকা রাখে |
মাটি | দোয়াঁশ বা বেলে-দোয়াঁশ মাটি |
সার | মাসে একবার হালকা সার |
মানি প্লান্ট গাছের উপকারিতা
বায়ু শোধনকারী: মানি প্লান্ট বাতাস থেকে বিষাক্ত পদার্থ শোষণ করে এবং অক্সিজেন নির্গত করে। এটি ফরমালডিহাইড, বেনজিন এবং ট্রাইক্লোরো ইথিলিন সহ বিভিন্ন ক্ষতিকারক গ্যাস শোষণ করতে পারে।
ক্লান্তি কমায়: সবুজের ছোঁয়া যে শুধু বাড়ির সৌন্দর্য বাড়ায় তা নয়, মানসিক শান্তি ও সমৃদ্ধিও আনে, তা মানি প্লান্টের মতো গাছই প্রমাণ করে।
সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে: মানি প্লান্ট যেখানেই রাখা হোক না কেন, সেখানে একটি সবুজ স্পর্শ যোগ করে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।
মানিপ্লান্ট এর মত অন্যান্য ইনডোর প্লান্টের উপকারিতা অনেক। যা আপনাকে অবাক করে তুলবে।
মানিপ্লান্ট গাছের যত্ন যেভাবে নিবেন
মানিপ্লান্ট গাছকে দোয়াঁশ বা বেলে-দোয়াঁশ মাটি মাটিতে রোপণ করে, পরোক্ষ সূর্যের আলোতে রাখুন এবং মাঝে মাঝে পানি দিন। মানিপ্লান্ট গাছের যত্নে নিচের বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে।
১. পরিমিত পরিমাণ পানি দিন
মানিপ্লান্ট গাছে সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ দিন পানি দিলেই হয়। তবে নিয়মিত পানি দেওয়ার চেষ্টা করা প্রয়োজন। গাছ কত বড় তার উপর পানি দেওয়ার পরিমাণ নির্ভর করে। অতিরিক্ত পানি দেওয়া এড়িয়ে চলুন। কেননা অতিরিক্ত পানি দিলে গাছের পাতা হলুদ হয়ে মারা যাবে।
প্রত্যেকবার গাছে পানি দেওয়ার আগে টবে পর্যাপ্ত পানি আছে কিনা তা বোঝার জন্য প্রয়োজনে মাটিতে হাত দিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।
আপনি যদি মানিপ্লান্ট গাছে ট্যাপের পানি দেন কিন্তু সে পানিতে যদি অতিরিক্ত পরিমাণে ক্লোরিন এবং ফ্লোরিন থাকে। সেক্ষেত্রে এক বালতি পানি ধরে একদিন বাইরে রেখে রেখে দিয়ে বালতি থেকে উপরের দিকের পানি গাছে দিতে পারেন।
২. পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রাখুন
ঘরে বাইরে যে কোন আংশিক ছায়াযুক্ত স্থানে মানিপ্লান্ট গাছ সহজে বৃদ্ধি পায়। প্রখর সূর্যের তাপে মানিপ্লান্ট বেঁচে থাকতে পারে না। অন্যদিকে অতিরিক্ত ছায়াযুক্ত স্থান যেমন ঘরে মানিপ্লান্ট রাখলে সূর্যালোকের অভাবে পর্যাপ্ত খাবার তৈরি করতে পারে না এবং পাতায় আর বর্ণ বৈচিত্র দেখা যায় না।
তাই গাছটি এমন জায়গায় রাখতে হবে যেন এটি নির্দিষ্ট সময় সূর্যালোক পাই আবার কিছু সময় ছায়ায় থাকে অথবা তীর্যকভাবে সূর্যালোক পায়। এজন্য কাচের জানালার পাশে অথবা বেলকনিতে গাছ রাখতে পারেন।
৩. জৈব সার ব্যবহার করুন
মানিপ্লান্ট গাছ বৃদ্ধির জন্য অতিরিক্ত কোন সারের প্রয়োজন হয় না। বাড়িতে থাকা জৈব সার বা গোবর সারে গাছের ভালো বৃদ্ধি হয় তবে। অন্যদিকে ইপসম লবণ, বেকিং সোডা, ডিমের খোসা এই উপাদান গুলো মানিপ্লান্ট গাছের বৃদ্ধিতে অনেক সহায়তা করে।
৪. পোকামাকড় প্রতিরোধ ও প্রতিকার
মানিপ্লান্ট গাছে পোকামাকড়ের আক্রমণ তেমন একটা হয় না। তবে মিলি বাগ বা অ্যাফিড জাতীয় পোকামাকড়ের আক্রমণ হলে, আক্রান্ত পাতা ভালোভাবে পানি দিয়ে ধুয়ে মুছে নিতে হয়। এরপর নিমের তেল লাগিয়ে দিতে পারেন। প্রয়োজনে আক্রান্ত স্থান কেটে কেটে ফেলে দিতে পারেন।
৫. উপযুক্ত তাপমাত্রায় রাখুন
মানিপ্লান্ট বিভিন্ন ধরনের তাপমাত্রায় খাপ খাইয়ে নিতে পারে। মানিপ্লান্ট উদ্ভিদটি অতিরিক্ত তাপমাত্রায় বেঁচে থাকতে পারলেও কম তাপমাত্রায় বেঁচে থাকতে পারে না।
মানিপ্লান্ট উদ্ভিদের জন্য উপযুক্ত তাপমাত্রা হলো ৬০ থেকে ৮৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট। আবহাওয়া খুব উষ্ণ থাকলে মাঝে মাঝে বোতলে করে পানি গাছে স্প্রে করে দিতে পারেন।
মানি প্লান্ট গাছ লাগানোর নিয়ম
মানিপ্লান্ট গাছ সাধারণত দুই ভাবে তার লাগানো যায়।
- টবের মাটিতে
- পানিতে মানিপ্লান্ট গাছ
তবে মাটিতে লাগানো মানিপ্লান্ট গাছের বৃদ্ধি তুলনামূলক বেশি হয়।
একটি মানিপ্লান্ট গাছের লতা থেকে ২০-৩০ সেমি কান্ড কেটে নিন। একটি গ্লাস বা বোতলের পানিতে কাটা কান্ড রেখে দিন। তবে সম্পূর্ণ কান্ডটি পানিতে ডুবিয়ে রাখবেন না। অল্প কিছু অংশ পানিতে ডুবিয়ে রাখবেন বাকি অংশ যেন উপরে উঠে থাকে।
যে পাত্রে পানি দিয়ে লতাটি রাখবেন সেটা যেন কমপক্ষে ছয় ঘন্টা সূর্যালোক পায়। কয়েক সপ্তাহ পর খেয়াল করবেন কান্ড হতে অনেকগুলো মূল বের হয়েছে।
কাণ্ড থেকে মূল গজিয়ে গেলে সেটিকে টবে লাগাতে পারেন। টবের মাটির সাথে কিছু পরিমাণ জৈব সার মিশিয়ে দিলে মানিপ্লান্ট গাছের বৃদ্ধি ভালো হবে।
পানিতে মানিপ্লান্ট গাছ
স্বচ্ছ কোন প্লাস্টিক বা কাঁচের পাত্রে পরিমিত পরিমাণ পানি দিয়ে মানিপ্লান্ট গাছের কান্ড রেখে যেতে পারেন। কিছুদিন পর শিকড় গজাবে এবং ধীরে ধীরে গাছ বাড়তে শুরু করবে। নিয়মিত পানি পরিবর্তন এবং পানিতে ছোট ছোট পাথর দিলে গাছ ভালো থাকবে।
মানি প্লান্টের বিভিন্ন প্রজাতি
মানিপ্লান্ট গাছের অনেকগুলো প্রজাতি রয়েছে। এর মধ্যে বহুল প্রচলিত কয়েকটি প্রজাতির নাম হল:
- গোল্ডেন মানি প্লান্ট;
- স্প্লিট লিফ মানি প্লান্ট;
- মার্বেল কুইন মানি প্লান্ট;
- মার্বেল কিং মানি প্লান্ট;
- সুইস পনির মানি প্লান্ট;
- নিয়ন মানি প্লান্ট।
মানি প্লান্ট গাছের দাম
মানিপ্লান্ট গাছের দাম মূলত নির্ভর করে গাছের আকৃতি এবং বিভিন্ন প্রজাতির মানিপ্লান্ট গাছের ধরনের উপর। তবে বর্তমানে মানিপ্লান্ট গাছ গুলোর দাম ১০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে।
মানি প্লান্ট কি বিষাক্ত?
সুইডেনের ইনস্টিটিউট অব হেলথের অণুজীব রোগতত্ত্ব বিভাগের পরিচালক ফিলিপ রস এর মতে –
- মানি প্লান্টগাছে এক বিরল ব্যাকটেরিয়া যদি থাকে তবে গাছের সংস্পর্শে থাকলে ত্বকে জ্বালাপোড়া হতে পারে গলা ও মাথাব্যথা, শ্বসনতন্ত্রে সমস্যাও দেখা দেয়।
- মানিপ্লান্ট গাছ বাসায় অতিরিক্ত পরিমাণ থাকলে স্নায়ুতন্ত্রে সমস্যা হতে পারে অনেক ক্ষেত্রে অনিদ্রার সমস্যা হয়।
সাবধানতা
মানি প্লান্ট গাছের কান্ডে ও পাতায় ক্যালসিয়াম অক্সালেট থাকে। ভুল করে খেয়ে ফেললে মুখে ও গলায় অস্বস্তি সহ বিষক্রিয়াহতে পারে। তাই বাড়িতে ছোট বাচ্চা বা পোষা প্রাণী হিসেবে কুকুর বিড়াল থাকলে গাছটি তাদের নাগালের বাইরে রাখুন। এছাড়া মানিপ্লান্ট এর ডাল পাতা অহেতুক বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করা ঠিক না।
মানিপ্লান্ট দেখতে আকর্ষণীয় হওয়ায় এবং সহজে পরিচর্যা করা যায় বলে ঘর সাজাতে দিন দিন এর কদর বেড়ে চলেছে। মানিপ্লান্ট শুধু একটি গাছ নয়, এটি সবুজের প্রতীক এবং প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের প্রতীক। তাই একটি মানি প্লান্ট এর চারা কিনে আপনার ঘর বা বারান্দা সাজিয়ে তুলুন।
FAQs
ইনডোর প্লান্ট নিয়ে আরও পড়ুন