রুম হিটার ব্যবহারের নিয়ম ও সতর্কতা – যা জানা উচিত

শীতকালে রুম হিটার ব্যবহার করে আপনার ঘর গরম রাখতে পারলেও, অসাবধানতায় ডেকে আনতে পারেন বিপদ। রুম হিটার ব্যবহারের সঠিক নিয়ম ও সতর্কতা মেনে নিরাপদ থাকুন।

রুম হিটার ব্যবহারের নিয়ম

শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য রুম হিটার একটি সহজ, কার্যকর ও জনপ্রিয় উপায়। আপনার ঘরের আকার, বাজেট এবং প্রয়োজন অনুযায়ী একটি উপযুক্ত হিটার ব্যবহার করা প্রয়োজন।

কোন রুম হিটার আপনার কেনা উচিত, রুম হিটার ব্যবহার করার নিয়ম ও সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলাম। আশা করি আপনার কাজে লাগবে।

রুম হিটার ব্যবহারের নিয়ম

রুম হিটার ব্যবহারের ক্ষেত্রে সারাক্ষণ হিটার চালিয়ে রাখার কোনো প্রয়োজন হয় না। সর্বোচ্চ ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা চালিয়ে রাখলেই ঘর অনেক সময় পর্যন্ত গরম থাকে। ঘর উষ্ণ রাখার জন্য ঘরের ভেতর থেকে তাপ যেন বাইরে যেতে না পারে, এবং বাহির থেকে ঠান্ডা বাতাস প্রবেশ না করে তার দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

রুম হিটার কিভাবে ব্যবহার করতে হয় সেটা মূলত হিটারের ধরনের উপর নির্ভর করে। তাই রুম হিটারের ম্যানুয়ালটি ভালোভাবে পড়ে নিবেন। Room Heater চালু অবস্থায় এটি নিরাপদ দুরত্বে রাখবেন।

রুম হিটার কেনার আগে অবশ্যই হিটারের ধরণ ও কার্যপ্রক্রিয়া সম্পর্কে আপনার জানা উচিত। আপনার ঘরে কী ধরণের হিটার প্রয়োজন তা নির্ভর করবে রুমের সাইজ এবং পছন্দের উপর।

রুম হিটারের ধরণ

বর্তমানে বাজারে সাধারণত তিন ধরনের হিটার পাওয়া যায়।

  • Convection Heater 
  • Fan-Forced Heater
  • Radiant/Infrared Heater

চলুন আপনাদের কেনার সুবিধার্থে বিস্তারিত আলোচনা করি। 

1. Convection Heater

পুরো রুম গরম করার জন্য এই হিটার বেশ ভালোই সার্ভিস দেয়। কনভেকশন হিটার বাতাসকে গরম করে এবং সেই গরম বাতাসকে ঘরের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়। এই প্রক্রিয়াকে কনভেকশন বলা হয়। ভালো মানের এই হিটার গুলোর দাম প্রায় ১২ থেকে ১৪ হাজার।

2. Fan-Forced Heater

ফ্যান-ফোর্সড হিটার চলে মাইকাথার্মিক, সিরামিক, কয়েল ইত্যাদির সাহায্যে। মূলত এটি তাপকে দ্রুত এবং সমানভাবে একটি নির্দিষ্ট এলাকায় ছড়িয়ে দিতে একটি ফ্যান ব্যবহার করে। 

এই হিটার গুলি সাধারণত অন্যান্য ধরনের হিটারের তুলনায় দ্রুত কাজ করে এবং কম সময়ে একটি ঘরকে গরম করতে পারে। হিটারে হালকা শব্দ হলেও তা ঘুমের সমস্যা করে না।

3. Radiant/Infrared Heater

আপনি যদি দ্রুত রুম গরম করে ফেলতে চান সেক্ষেত্রে এই রেডিয়েন্ট/ইনফারেড হিটারটি কিনতে পারেন। এটি দ্রুত কাজ করে বলে বেশ জনপ্রিয়।

এই ধরনের হিটার বাতাসকে গরম না করে বস্তুকে গরম করে যার ফলে ঘর উষ্ণ থাকে। এটি বাতাসকে শুষ্ক করে না এবং ধুলো বা এলার্জেনকে বাতাসে ছড়িয়ে দেয় না।তবে এই ধরনের এর রুম হিটার গুলোর দাম অনেক বেশি। সর্বনিম্ন দাম ১০ হাজার টাকার উপরে।

রুম হিটারের দাম কত?

সাধারণত রুম হিটার গুলোর দাম হিটারের ধরন এবং বিভিন্ন ব্র্যান্ডের উপর নির্ভর করে। বাংলাদেশে  ফ্যান-ফোর্সড রুম হিটার গুলো বেশি প্রচলিত। আপনার বাজেট ৫ থেকে ৬ হাজার টাকার মধ্যে থাকলে আপনি অনায়াসে একটি ভালো মানের Fan Forced Room Heater কিনতে পারবেন।

আসুন বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কিছু রুম হিটারের দাম জেনে নিন-

ব্র্যান্ডসর্বনিম্ন দামসর্বোচ্চ দাম
ওয়ালটন রুম হিটারের দাম১৫০০ টাকা৬০০০ টাকা
ভিশন রুম হিটারের দাম১৩০০ টাকা৪৭০০ টাকা
নোভা রুম হিটারের দাম২০০০ টাকা৩০০০ টাকা

রুম হিটার কেনার সময় বিবেচ্য বিষয়

  • ঘরের আকার: ঘরের আকারের উপর ভিত্তি করে হিটারের ক্ষমতা অর্থাৎ হিটারটি কত ওয়াটের হবে সেটি নির্বাচন করুন ।
  • সুরক্ষা: হিটার কেনার সময় সুরক্ষার বিষয়টি বিবেচনায় আনুন। আগুন নিরোধক এবং ওভারহিটিং প্রতিরোধী হিটার কিনুন।
  • বিদ্যুৎ খরচ: বিভিন্ন ধরনের হিটারের বিদ্যুৎ খরচ ভিন্ন। সুতরাং আপনার বাজেটের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ  হিটার কিনুন।
  • বৈশিষ্ট্য: হিটারটি কোন ধরনের এবং এতে কি কি বৈশিষ্ট্য রয়েছে তা সঠিকভাবে জানুন। 

রুম হিটার ব্যবহারে সাবধানতা

Room Heater একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস। তাই হিটার ব্যবহারের সময় সাবধানতা অবলম্বন করা খুবই জরুরি। যেমন-  

  • নিরাপদ দূরত্ব: হিটারকে জ্বালানি সামগ্রী, পর্দা এবং অন্যান্য জ্বলনশীল বস্তু থেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখুন।
  • শিশু এবং পোষা প্রাণী: শিশু এবং পোষা প্রাণীকে হিটারের কাছে একা থাকতে দিবেন না। 
  • ব্যবহারের পর: হিটার ব্যবহারের পর অবশ্যই বন্ধ করে দিন এবং নিরাপদ স্থানে রাখুন।

রুম হিটারের ক্ষতিকর দিক

যে কোনো ইলেকট্রনিক্স পণ্য অধিক পরিমাণে ব্যবহার করলে কিছু পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। ঠিক তেমনি অতিরিক্ত রুম হিটার ব্যবহারেও শরীরের কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন

  • ঘরের বাতাসে আর্দ্রতা কমে যায় ও ত্বকের শুষ্কতা বাড়ে।
  • যাদের অ্যালার্জি বা সোরিয়াসিসের সমস্যা আছে তাদের শরীরের চুলকানি হতে পারে।
  • হিটারের পাশে বসলে অ্যাজমার রোগীরা রুম হিটারের কারণে ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন।
  • ব্রঙ্কাইটিস ও সাইনাসের রোগীরাও এই যন্ত্রের কারণে সমস্যায় পড়তে পারেন। হিটারের বাতাস এসব রোগীর ফুসফুসে কফ জমাতে শুরু করে।

শীতকালে শুধু হিটার বা অন্য উপায় এর মাধ্যমে ঘর গরম করলে করে বিছানায় বসে থাকলে চলবে না। ২৪ ঘণ্টায় দিন হয় তাই আমাদের যথেষ্ট ছোটাছুটি ও কাজকর্ম করে নিজের শরীর গরম রাখতে হবে।

Similar Posts

Leave a Reply