শীতকালে ঘর গরম রাখার ১২ কার্যকরী উপায়
শীতকালে সোয়েটার ও গরম কাপড় পরিধানের পাশাপাশি ঘরকে কিভাবে উষ্ণ রাখা যায় তার পদক্ষেপ নিতে হবে। দেখুন ঘর গরম রাখার কিছু কার্যকরী উপায় ও টিপস।
শীতকালে ঠান্ডা ঘরে থাকা কষ্টকর একটি বিষয়। ঠান্ডায় শরীর কাঁপতে থাকে জীবন অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে। তবে ঘর গরম রাখার জন্য বিভিন্ন উপায় রয়েছে।
এই ব্লগে আপনাদের শীতকালে ঘর গরম রাখার সবচেয়ে সাশ্রয়ী উপায় এবং ঘর গরম করার হিটার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেব।
শীতকালে ঘর গরম রাখার উপায়
শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য ঘরের উজ্জ্বল রং করা, অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল পেপার, বাবল র্যাপ, উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বাল্ব, Hot and Cold AC এবং হিটার ব্যবহার সহ আরো অনেক কার্যকর উপায় আছে। আসুন কিছু সহজ এবং কার্যকর উপায় সম্পর্কে ধারণা নিই:
১. ফায়ারপ্লেস
ঘরকে গরম রাখার জন্য শীত প্রধান দেশে ফায়ারপ্লেস ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ ঘরের মধ্যে আগুন জ্বালানোর ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশি তেমন শীত পড়ে না বলে সেটার তেমন প্রয়োজন নেই। তবে কিছু কিছু বিলাসবহুল বাড়িতে এই ধরনের ব্যবস্থা থাকে।
২. জ্বলন্ত কয়লা পাত্র
কোন মাটির পাত্রে কিছু জ্বলন্ত কয়লা এনে রেখে ঘরে রেখে দিতে পারেন। এতে করে কয়লা থেকে নির্গত তাপ ঘরকে উষ্ণ রাখবে। চেষ্টা করবেন জ্বলন্ত কয়লার পাত্রটির আশেপাশে কোন বস্তু না রাখতে। কেননা আগুন ধরার সম্ভাবনা থাকতে পারে।
৩. রুম হিটার ব্যবহার করুন
শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য রুম হিটার ব্যবহার করা যায়। ঘর গরম করার জন্য সারাক্ষণ রুম হিটার চালিয়ে রাখার কোনো প্রয়োজন নেই। ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা চালিয়ে রাখলেই ঘর অনেক সময় পর্যন্ত গরম থাকে। তবে রুম হিটার ব্যবহারের সময় বা এর পর ঘরের জানালা বন্ধ রাখতে হবে, যাতে গরম বাতাস বেরিয়ে না যায়।
বাজারে বিভিন্ন ধরনের হিটার পাওয়া যায়। যেমন: কনভেকশন রুম হিটার, স্পেস হিটার, ইলেকট্রিক ব্ল্যাঙ্কেট ইত্যাদি। এসব রুম হিটার আপনি ১৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫০০০ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন।
৪. Air conditioner চালিয়ে ঘর গরম করা
সাধারণ এসি রুম গরম করতে পারে না, কারণ এটি শুধুমাত্র ঘরের তাপমাত্রা কমিয়ে আনতে পারে। কিন্তু এসির মাধ্যমে ঘর গরম হতে পারে, যদি কেউ হট অ্যান্ড কোল্ড এসি চালান, যা গ্রীষ্মকালে ঠান্ডা বাতাস দিয়ে ঘরকে ঠান্ডা রাখতে পারে এবং শীতকালে গরম বাতাস দিয়ে ঘরকে গরম রাখতে পারে।
যদি শীতকালে এসির উষ্ণ বাতাস উপভোগ করতে চান, তবে এর জন্য hot and cold Ac কিনতে হবে। তাহলে আপনাকে হিটার কেনার জন্য অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হবে না।
কয়েক বছর আগেও শুধুমাত্র দামি দামি বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোতে এ ধরনের এসির প্রচলন ছিল। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে ওয়ালটন, ভিশন সহ প্রায় সকল ব্যান্ডের এসিতে এই সুবিধা থাকছে। যা আপনি ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন।
৫. ঘরে সূর্যের আলো প্রবেশ করতে দিন
শীতকালে দিনের বেলায়, জানালা খোলা রেখে ঘরে রোদ প্রবেশ করার সুযোগ দিন। সুর্য উঠলে জানালার পর্দা সরিয়ে দিন। আবার সূর্য ডোবার আগেই সকল জানালা বন্ধ করে ভারী পর্দা টানিয়ে দিন, যাতে ঘরের ভেতরের তাপ আটকানো যায়।
শীতকালে রাতের বেলায় দরজা-জানালা ভালো করে বন্ধ রাখুন। কোন ফাঁকা থাকলে সেগুলো বন্ধ করে দিন।
৬. বিছানায় গরম পানির বোতল রাখুন
শীতকালে বিছানা ও কম্বলকে গরম করার জন্য গরম পানির বোতল বা হট ওয়াটার ব্যাগ কম্বলের নিচে রেখে দিতে পারেন। এতে করে বিছানা উষ্ণ থাকে, আপনার ঘুমাতে বা বিশ্রাম নিতেও অস্বস্তি হবে না।
৭. বাবল র্যাপ ব্যবহার
শীতে ঘর উষ্ণ রাখতে বাবল র্যাপকে সহজ উপায় হিসেবে বেছে নিতে পারেন। বাবল র্যাপের বুদবুদগুলো বাতাস দিয়ে পূর্ণ থাকে। এই বাতাস তাপ পরিবাহিতা কে বাধা দেয়।
ফলে ঘরের ভেতরের তাপ বাইরে বের হয়ে যেতে বাধা পায়। তাই ঘরে তাপমাত্রা ধরে রাখতে চাইলে আপনার জানালা ও দরজা গুলোতে বাবল র্যাপের শিট আটকিয়ে রাখতে পারেন। তবে দিনের বেলা সূর্যালোক থাকা অবস্থায় সেটি খুলে দিবেন।
৮. মোটা পর্দা ব্যবহার করুন
শীতকালে ঘরে মোটা পর্দা ব্যবহার করুন। দিনের বেলায় রোদ থাকলে পর্দা খুলে রাখুন যাতে ঘর গরম হয় এবং রাতে জানালা লাগিয়ে পর্দা টেনে দিন যাতে তাপ বাইরে না যেতে পারে।
৯. কার্পেট বা শতরঞ্জি
মেঝেতে কার্পেট বা শতরঞ্জি বিছিয়ে দিন। এটি ঘরের মেঝে ঠাণ্ডা হওয়া থেকে রক্ষা করে। বর্তমানে পাটের তৈরি নানা আধুনিক কারুকাজের মাদুর পাওয়া যায় যা মেঝের ঠান্ডা থেকে সুরক্ষা দেয়।
১০. ছাদে পর্যাপ্ত রোদ পড়ার সুযোগ দিন
শীতকালে রাতের বেলা ফোম বা অন্য কোনো তাপ নিরোধক উপাদান দিয়ে ছাদ ঢেকে দিতে পারেন। এতে করে রাতের ছাদে শীত কম লাগবে। ফলশ্রুতিতে ঘরে ঠান্ডা কম অনুভূত হবে।
শীতকালে আপনার বাড়ির ছাদ যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে সূর্যের আলো পায় সেদিকে লক্ষ রাখুন। বাড়ির আশেপাশে কোন বড় গাছপালা থাকলে এবং সেগুলোর ডাল পালা যদি ছাদের চারপাশে ঘিরে ফেলে তাহলে সেগুলো ছাটাই করে দিতে পারেন। কেননা দিনের বেলার সূর্যের তাপ ছাদে পড়লে তা শোষিত হয়ে ঘর উষ্ণ থাকবে।
১১. উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বাল্ব ব্যবহার
আজকাল আমরা সবাই কম watt এর এলইডি লাইট এ অভ্যস্ত। কিন্তু ১০০ /২০০ ওয়াটের সেই পুরাতন হলুদ বাল্ব গুলো ব্যবহার করলে সহজে আপনার ঘরকে গরম রাখতে পারবেন। কেননা এ বাল্বগুলো থেকে অনেক তাপ উৎপন্ন হয়। আপনার ঘরে যদি ১০০ ওয়াটের দুইটি বাল্ব লাগিয়ে নেন তাহলে ঘর অনেক গরম থাকবে। তবে হ্যাঁ বিদ্যুৎ খরচ বেশি হবে।
১২. ঘরে উজ্জ্বল রং ব্যবহার করুন
উজ্জ্বল রঙের তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেশি হাওয়ায় তা তাপমাত্রা ধরে রাখতে সক্ষম। তাই যদি উজ্জ্বল রঙ দিয়ে দেয়াল রঙ করানো যায়, তবে তা তাপমাত্রা আবদ্ধ করে রাখতে সক্ষম হবে। অন্যদিকে সাদা রঙের তাপ ধারণক্ষমতা কম। তাই ঘরে যদি সাদা রং করা থাকে সেক্ষেত্রে ঘর বেশি ঠান্ডা অনুভূত হতে পারে।
১৩. দেয়ালে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল পেপার
অ্যালুমিনিয়াম খুব ভালো তাপ পরিবাহক হিসেবে কাজ করে। ফলে শীতে ঘরের উষ্ণতা রক্ষায় অন্যতম কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এমনকি তাপ প্রতিফলনের ক্ষেত্রেও এটা দারুণভাবে কাজে আসে। শীতকালে ঘর গরম রাখতে ঘরের দেয়ালে ফয়েল পেপার ব্যবহার করতে পারেন
অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল তাপকে প্রায় ৯৭ % পর্যন্ত প্রতিফলিত করে। ফলে তাপ, ঘরের ভিতরে বা বাইরে যেতে বাধা পায় এবং ঘরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়, ঘর উষ্ণ হয়।
আশা করি আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে ঘরকে গরম রাখার সবচেয়ে কার্যকর উপায় ও রুম গরম করার মেশিন সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।