ঘর সাজানোর পাতাবাহার গাছের নাম ও ছবি
ঘর সাজাতে কোন পাতাবাহার গাছগুলো বেশি উপযোগী? শেয়ার করলাম বিভিন্ন ধরনের পাতাবাহার গাছের নাম ও ছবি যেগুলো আপনার বাড়িকে সবুজ ও সাজিয়ে তুলবে।
বাগান হোক কিংবা ঘর যেকোনো স্থানকে সাজিয়ে তুলতে পাতাবাহার গাছ বা অন্যান্য ইনডোর প্ল্যান্ট গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন আকার, রং ও আকৃতির পাতাবাহার গাছ ঘরে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যোগ করে ঘরকে আরও সুন্দর করে তুলতে পারে।
আজকের আর্টিকেলটিতে ঘর সাজানোর পাতাবাহার গাছের নাম ও ছবি তুলে ধরার চেষ্টা করব। আসুন জেনে নেওয়া যাক ঘর সাজানোর পাতাবাহার গাছ সম্পর্কে বিস্তারিত।
কিছু জনপ্রিয় পাতাবাহার গাছের নাম ও ছবি
১. কার্টেইন ক্রিপার (Curtain Creeper)
সুদৃশ্য লতানো জাতীয় গাছ আইভিলতা এর আকর্ষণীয় বিটপের জন্য সমাদৃত।
- জাতভেদে আইভিলতা ডোরাকাটা ছোপযুক্ত অথবা পাতার কিনারা সবুজাভ সাদা রংয়ের হয়।
- ঘরের বারান্দায় অথবা ঘরের ভিতরে টবে সুন্দরভাবে জন্মানো যায়। এ ছাড়া ঘরের দেয়ালে অথবা বড়গাছের সাথে একে তুলে দিয়েও শোভাবর্ধন করা যায়।
- আইভিলতা ইউরোপীয় অঞ্চলের গাছ হলেও ১৫° সেঃ এর নীচে তাপমাত্রায় এর বৃদ্ধি কমে যায়।
- রৌদ্রজ্জ্বল জায়গা এ গাছ পছন্দ করে।
- জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ মাটি এর চাষের জন্য উত্তম।
- লতার কাটিং এর মাধ্যমে আইভিলতার বংশবিস্তার করা হয়।
সতর্কতা
- বিষাক্ত: আইভিলতা কিছুটা বিষাক্ত হতে পারে। তাই বাড়িে বাচ্চা বা পোষা প্রাণী যদি থাকে তবে সাবধানে রাখুন।
- দেয়ালের ক্ষতি: আইভি লতা বাইরের দেয়ালকে খুব বেশি আচ্ছাদন করে নিলে দেয়ালে পানি জমে দেয়ালের ক্ষতি হতে পারে। তাই দেয়ালে লাগানোর সময় সাবধান থাকুন।
২. কোলিয়াস
বাহারী পাতাযুক্ত সুদৃশ্য মৌসুমী গাছের মধ্যে কোলিয়াস অন্যতম। শীত মৌসুমে এর আকর্ষনীয় পাতা ও ডগার রংয়ে সকলে মোহিত হয়।
- উচ্চতা: এর উচ্চতা ১ মিটারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কান্ড খুব নরম এবং রসালো। বয়সের সাথে সাথে কিছুটা শক্ত হয়।
- আকৃতি: পাতা হৃদয়াকৃতির, পত্রফলক মখমল এর মত। পাতার কিনারা খাঁজ কাটা।
- সূর্যালোক: আংশিক সূর্যালোক ও ছায়া পায় এমন জায়গা কোলিয়াস জন্মানোর জন্য উপযুক্ত। তবে সকালের সূর্য পায় এমন স্থানই নির্বাচন করা উচিত।
- মাটি: সুনিষ্কাশিত বেলে দোআঁশ মাটি কোলিয়াস চাষের জন্য উপযোগী।
- পানি:এই গাছ জলাবদ্ধতা একদম সহ্য করতে পারেনা।
- আবহাওয়া: গ্রীষ্মকালে গাছের বৃদ্ধি হলেও শীতকালেই এর আসল রং ফুটে ওঠে।
৩. এরিকা পাম (Areca Palm)
আর একটি জনপ্রিয় সুদৃশ্য পামজাতীয় গাছের নাম এরিকা পাম। খুবই আকর্ষণীয় এই গাছ অনেকটা সুপারী গাছের মত দেখতে। এই গাছ তেমন বড় বৃক্ষের মত হয় না।
- এরিকা পাম বাগানের বা ঘরের শোভা বৃদ্ধির জন্য লাগানো যেতে পারে।
- গাছ কম উচ্চতা বিশিষ্ট হয় এবং ধীরে ধীরে বাড়ে বলে টবে লাগিয়ে ঘরের বারান্দা, ব্যালকনি বা ছাদে স্থাপন করে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা যায়।
- এরিকা পাম গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের গাছ। উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু এর উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত।
- বেলে দোআঁশ মাটিতে এই গাছ ভাল জন্মে এবং বাগানের আংশিক ছায়াযুক্ত স্থানে রোপণের জন্য উত্তম।
৪. ক্রোটন (Croton)
পাতাবাহারের গাছ হিসেবে ক্রোটন গাছ অনেক জনপ্রিয়। উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু যুক্ত পরিবেশে এই গাছের বৃদ্ধি ভালো হয়।
- এ ধরনের গাছে পোকামাকড়ের উপদ্রব কম হয়।
- ক্রোটন গাছ সূর্যালোক পছন্দ করে। তাই ঘরের ভেতর টবে ক্রোটন গাছ রাখলে প্রতিদিন অন্তত ৪ থেকে ৬ ঘন্টা যাতে সেটা রোদ পায় তা দেখতে হবে।
- উর্বর দোয়াঁশ বা বেলে-দোয়াঁশ মাটি এই গাছের জন্য উপযুক্ত।
- ক্রোটন গাছ অতিরিক্ত পানি একেবারেই সহ্য করতে পারে না।
৫. স্পাইডার প্ল্যান্ট (Spider Plant)
সবুজ পাতার কিনারায় সাদা বর্ডারের গাছটির নাম স্পাইডার প্ল্যান্ট। ছোট ছোট টবে করে বারান্দায় ঝুলিয়ে রাখতে পারেন। দেখতে অনেক সুন্দর দেখায় এবং বেশি যত্নেরও প্রয়োজন হয় না । এটি বাতাসে থাকা বিষাক্ত ফর্মালডিহাইড সরিয়ে ফেলে ঘরের বাতাস পরিশুদ্ধ করতে সহায়তা করে।
ইনডোর পাতাবাহার গাছের নাম হিসেবে স্পাইডার প্ল্যান্ট খুব জনপ্রিয়।
আরও দেখুন: যেভাবে স্পাইডার প্লান্টের যত্ন নিবেন
বিষাক্ত পাতাবাহার গাছ
সব পাতাবাহার গাছ নিরাপদ নয়। অনেক গাছই বিষাক্ত হতে পারে, বিশেষ করে শিশু এবং পোষা প্রাণীর জন্য। তাই ঘরে কোন গাছ রাখবেন তা নির্বাচন করার আগে ভালো করে খোঁজ নেওয়া জরুরি। কয়েকটি বিষাক্ত পাতাবাহার গাছের উদাহরণ হলো-
- ক্যালাডিয়াম
- ডায়ফেনবাসিয়া
- স্নেইক প্ল্যান্ট
- ফিলোডেনড্রন বা মানিপ্ল্যান্ট
- পিস লিলি
১. ক্যালডিয়াম (Caldium)
প্রথমবার দেখলে যেন মনে হয় যেন কেউ কচু পাতার উপর বিভিন্ন রঙ ছিটিয়ে দিয়েছে। অথবা কচু পাতার সাথে বিভিন্ন রঙে মিশ্রণ দেখা যায়। শুষ্ক মাটিত এই গাছের জন্য উপযুক্ত। লাল ও গোলাপী ছাড়াও বিভিন্ন রঙের ক্যালডিয়াম গাছ নার্সারিতে পাওয়া যায়।
বিষাক্ততা: দীর্ঘসময় ধরে এর সংস্পর্শে থাকলে এক ধরনের স্থায়ী ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হয়। যার ফলে মুখ, জিহ্বা জ্বালাপোড়া, গলা ব্যথা, গিলতে এবং শ্বাস নিতে সমস্যা হতে পারে। শিশুরা এ গাছের পাতা মুখে দিলে জটিল পেটের পীড়ায় ভুগতে পারে।
২. ডাইফেনবাচিয়া (Dieffenbachia)
এই গাছের রসে বিষাক্ত ক্যালসিয়াম অক্সালেট থাকে, যা কিডনিতে পাথর তৈরি করতে পারে। এর রসের কারনে গলা ফুলে যেতে পারে।
ঘর সাজাতে পাতাবাহারের ব্যবহার
পাতাবাহার দিয়ে ঘরকে বিভিন্নভাবে সাজিয়ে তোলা যায়। যেমন-
- টবে: বিভিন্ন আকারের টবে পাতাবাহার রেখে ঘরের কোণে সাজানো যায়।
- হ্যাঙ্গিং বাস্কেট: হ্যাঙ্গিং বাস্কেটে পাতাবাহার লাগিয়ে ছাদ থেকে ঝুলিয়ে দেওয়া যায়।
- বইয়ের আলমারি: বইয়ের আলমারির উপরে বা তাকে ছোট ছোট পাতাবাহার রাখলে ভালো লাগে।
- টেবিলের উপর: টেবিলের উপরে ছোট্ট একটি পাতাবাহার রাখলে সৌন্দর্য বাড়ে।
- দেয়াল সাজানো: দেয়ালে পাতাবাহার ঝুলিয়ে সহজেই ঘরের শোভা বৃদ্ধি করা যায়।
পাতাবাহার গাছের নিয়ে সতর্কতা
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় পাতাবাহার দেখতে অনেক আকর্ষণীয়। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে পাতাবাহারে বিষাক্ততার পরিমাণ বেশি থাকে। এটি বিশেষ করে শিশুদের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
- তাই ঘর সাজাতে যেসব পাতাবাহার ব্যবহার করবেন সেগুলো যেন বিষাক্ত না হয়ে থাকে সে বিষয়ে ভালোভাবে জেনে নিবেন।
- গাছগুলোকে শিশুদের নাগালের বাইরে রাখার চেষ্টা করবেন। কোন উঁচু স্থানে যেখানে শিশুরা নাগাল পায় না সেখানে টব রাখার চেষ্টা করবেন। অথবা ঝুলন্ত টবে পাতাবাহার গাছ রাখার চেষ্টা করতে হবে।
পাতাবাহার নিয়ে কিছু প্রশ্নের উত্তর
আশা করি এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে ঘর সাজানোর পাতাবাহার গাছ গুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে ও বুঝতে পেরেছেন । তাই আপনার পছন্দমত পাতাবাহার গাছ বাছাই করুন এবং ঘরকে সাজিয়ে তুলুন।