ঘরোয়া পদ্ধতিতে বাড়ি থেকে ইঁদুর তাড়ানোর উপায়
ঘরে একবার ইঁদুর ঢুকতে পারলে আর রক্ষা নাই। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পুরো বাড়িতে উৎপাত শুরু করে দেবে। ঘরোয়া পদ্ধতিতে বাড়ি থেকে ইঁদুর তাড়ানোর কয়েকটি কার্যকরী উপায় নিয়ে এই ব্লগ।
ইঁদুর একবার বাড়িতে প্রবেশ করলে সহজে বের হতে চায় না। আবার খাদ্যদ্রব্য, জামা কাপড়, কাগজপত্র সবকিছু কেটে দেয়। ঘর থেকে ইঁদুর তাড়ানোর কার্যকর উপায় না জানলে এই যন্ত্রণা থেকে নিস্তার পাওয়া সম্ভব নয়।
তাই আজকের এই আর্টিকেলে ঘরোয়া পদ্ধতিতে ইঁদুর তাড়ানোর উপায়, ইঁদুর মারার বিষ নিয়ে আলোচনা করব।
ঘরোয়া পদ্ধতিতে ইঁদুর তাড়ানোর উপায়
ইঁদুর তাড়ানোর উপায় হিসেবে ঘরোয়া উপকরণ যেমন- লবঙ্গ, মরিচের গুড়া, পুদিনা পাতা, বেকিং পাউডার, রসুন ও মাথার চুল খুব ভালো কাজ করে। এ সকল উপাদান ইঁদুর তাড়াতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
১. লবঙ্গ
কয়েকটি লবঙ্গ নিয়ে ছোট কাপড়ের পুঁটলি বাঁধুন। তিন চারটি পুঁটলি ঘরের বিভিন্ন কোনায় রেখে দিন। ইঁদুরের যন্ত্রণা অনেক কমে যাবে।
২. মরিচের গুঁড়া
শুকনো মরিচের গুঁড়ো ইঁদুরের বাসার চারপাশে ছড়িয়ে রাখতে পারেন। মরিচের গুঁড়া ইঁদুরের গায়ে লাগলে জ্বালা করবে। ফলে বাড়ি থেকে পালাতে বাধ্য হবে। ইঁদুর তাড়ানোর ঘরোয়া উপায় হিসেবে এটি কার্যকর একটি উপায়।
৩. পেঁয়াজ
পেঁয়াজের ব্যবহার শুধু রান্নায় নয় ইঁদুর তাড়াতেও করা যায়। পেঁয়াজের গন্ধ ইঁদুর একেবারেই পছন্দ করে না। কিছুদিনের জন্য ঘরের বিভিন্ন আসবাব পত্রের নিচে এবং কোণা গুলোতে কাটা পেঁয়াজ রাখতে পারেন। পেঁয়াজ থাকার কারণে ইঁদুর ঘরে আসবে না।
আরও পড়তে পারেন:
৪. রসুন
ইঁদুর রসুনের গন্ধও সহ্য করতে পারে না। রসুন দিয়ে ইঁদুর তাড়াতে পানিতে রসুন ভিজিয়ে রাখুন। যেখানে ইঁদুরের উৎপাত বেশি, সেখানে সেই পানি স্প্রে করে দিন। অথবা রসুন বেটে তার সাথে পানি মিশিয়ে বোতলের সাহায্যে স্প্রে করতে পারেন।
৫. পুদিনা
ইঁদুর পুদিনা পাতার গন্ধ একেবারেই সহ্য করতে পারে না। পুদিনা পাতা বেঁটে তার রস করে পানির সাথে মিশিয়ে স্প্রে করতে পারেন।
৬. চুল
ইঁদুর তাড়ানোর জন্য আমাদের মাথার চুল বেশ কার্যকর করে। চুল যদি ইঁদুরের পায়ে জড়িয়ে পড়ে কিংবা ইঁদুরের মুখে চলে যায় তাহলে ইঁদুর মরে যাবে। তাই বাড়ি থেকে ইঁদুর তাড়াতে চাইলে আপনার ঝরে পড়া চুল গুলো ফেলে না দিয়ে ইঁদুর যে পথে যাতায়াত করে সে পথে রেখে দিতে পারেন।
অর্থাৎ ইঁদুর যে আসবাবপত্র তলায় থাকে কিংবা যেকোনো কোণা গুলোতে থাকে সেখানে চুল রেখে দিতে পারেন।
৭. বিড়াল পুষেন
বাসা বাড়ি ইঁদুরমুক্ত রাখতে আপনার বাড়িতে পোষা প্রাণী হিসেবে বিড়ালকে রাখতে পারেন। কারণ যে বাড়িতে বিড়াল থাকে সে বাড়িতে কখনো ইদুর আসবে না। বিড়ালের চোখে একবার ইঁদুর উপর পড়লে আর রক্ষা নাই। হয় ইঁদুরকে পালাতে হবে, না হয় মৃত্যু।
৮. বেকিং পাউডার
ইঁদুর বেকিং পাউডারের গন্ধ সহ্য করতে পারে না। বিভিন্ন আসবাবপত্রের নিচে ছোট ছোট কাগজের টুকরায় বেকিং পাউডার রেখে দিতে পারেন। ইঁদুরের উপদ্রব অনেকটাই কমে যাবে।
আরও পড়ুন:
ইঁদুর মারার অন্যান্য উপায়
ইঁদুর মারার জন্য বিভিন্ন ধরনের বিষ, গ্যাস ট্যাবলেট ও ইঁদুর মারার ফাঁদ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এই তিনটি পদ্ধতির মধ্যে যেকোনো একটি ব্যবহার করে ইঁদুর মারা যাবে।
১. ইঁদুর মারার ঔষধ
ঘরোয়াভাবে ইঁদুর তাড়ানো যায়। কিন্তু এদেরকে মারতে বাজারের রাসায়নিক বিষ বেশ কার্যকর। বাজারে বিভিন্ন ভাবে ইঁদুরের বিষ পাওয়া যায়। যেমন- কারেন্ট বিষ, গম বিষ ইত্যাদি।
কয়েকটি ইঁদুরের বিষের নাম হলো:
- Ratonil Rat Killing
- Bait BROMAPOINT
- ইবিচ র্যাট কিলার
- ইঁদুর মারার গ্যাস ট্যাবলেট
ইঁদুর মারার গ্যাস ট্যাবলেট
এটি হচ্ছে অ্যালুমিনিয়াম ফসফেট ট্যাবলেট যেটি ইঁদুরের গর্তে দিয়ে গর্তের মুখটি কাদামাটি দিয়ে ভালোভাবে বন্ধ করে দিলে ইঁদুর আর বাইরে আসতে পারে না। গ্যাস বন্দী হয়ে মারা যায়।
ইঁদুর মারার গ্যাস ট্যাবলেট দাম বেশি নয়। এই ট্যাবলেটের অসুবিধা হচ্ছে, এটি বাসায় ব্যবহার করতে পারবেন না, কারণ এর তীব্র গন্ধ সবার জন্য অসহ্য।
৩. ইঁদুর মারার ফাঁদ
ইঁদুর মারার কল ফাঁদ হিসেবে দারুণ কাজ করে। কলগুলোতে খাবার দিয়ে রাখলে খেতে এসে ইঁদুর আটকা পড়ে যায়। সাধারণত ইঁদুর মারার কল গুলোতে সুগন্ধিযুক্ত চাল একটি ছোট পুটলিতে বেঁধে রাখা হয় অথবা রুটি বা বিস্কিটের টুকরা দেওয়া হয়। সেই খাবারের গন্ধে ইঁদুর কলের ভিতরে প্রবেশ করে এবং আটকা পড়ে যায়।
এছাড়া ইঁদুর মারার আঠা দিয়েও একধরণের ফাঁদ বাজারে পাওয়া যায়। সবচেয়ে সুবিধা হচ্ছে, খাঁচা যুক্ত ইঁদুর মারার কলগুলো ভাল কাজ করে। তবে যদি বাড়িতে ইঁদুরের উৎপাত বেশি হয়, কল দিয়ে ইঁদুর মেরে শেষ করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে অন্য কোন কার্যকর উপায় প্রয়োগ করা উচিত।
বাসা বাড়িতে পোকামাকড় ও ইঁদুরের উৎপাত থেকে রক্ষাপেতে আপনার আশেপাশে কোন পেশাদার Pest Control Service এর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।