ইনডোর প্ল্যান্টের অসাধারন কিছু উপকারিতা

গবেষণায় দেখা গেছে, ইনডোর প্ল্যান্ট আমাদের মন ও শরীর ওপর ইতিবাচক প্রভাব রাখে। বিষন্নতা দূর করা, বাতাস পরিশোধন, মানসিক চাপ কমানোসহ ইনডোর প্ল্যান্টের অনেক উপকারিতা রয়েছে।

ইনডোর প্ল্যান্ট এর উপকারিতা

ইনডোর প্ল্যান্ট ঘরের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সাধারণ অর্থে ঘরের মধ্যে যে সকল গাছ রাখা হয় সেগুলোকে ইনডোর প্ল্যান্ট বলে।

তবে ঘরে গাছ রাখার একমাত্র উদ্দেশ্য সৌন্দর্য বর্ধন নয়। ইনডোর প্ল্যান্টের উপকারিতা অনেক। তার মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ এ গাছগুলো ঘরের বাতাস পরিষ্কার করতে সহায়তা করে।

বর্তমান যুগে যখন বায়ু দূষণের মাধ্যমে মানুষ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তখন বায়ু পরিষ্কারের করার এ অনবদ্য ইন্ডোর প্ল্যান্ট গুলোর জনপ্রিয়তা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে।

ইনডোর প্ল্যান্ট কি

ইনডোর প্ল্যান্ট হলো ঘরে মধ্যে টবে রাখা যায় এমন উদ্ভিদ। এগুলো সাধারণত আকারে ছোট হয় এবং কম আলোতে টিকে থাকতে পারে। এ গাছগুলো শুধু সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্যই ব্যবহৃত হয় না, বরং এগুলো আমাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্যও উপকারী ভূমিকা রাখে।

শহরে গাছ লাগানোর তেমন জায়গা থাকে না। তাই ইনডোর প্লান্ট গুলো ঘরে কিংবা বেলকনির গ্রিলে ঝুলিয়ে অনেকেই পরিচর্যা করতে দেখা যায়।

আসুন এবার জেনে নিই, ইনডোর প্লান্ট এর উপকারিতা।

ইনডোর প্ল্যান্ট এর উপকারিতা

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে ইনডোর প্ল্যান্ট ঘরের বায়ু বিশুদ্ধ করে এবং বায়ুর আর্দ্রতা ঠিক রাখে। তাছাড়া, প্রায় সময় ঘরে সবুজ রংয়ের সুন্দর গাছ দেখে আমাদের মানসিক অবসাদ ও বিষন্নতা দূর হয়। ইনডোর প্ল্যান্ট থাকলে ঘরের ভেতর পর্যাপ্ত অক্সিজেন থাকে বলে রাতে ভাল ঘুমাতে সাহায্য করে।

ইনডোর প্ল্যান্ট এর বহুবিধ উপকারিতা রয়েছে। এই উপকারিতা গুলোকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়, পরিবেশগত উপকারিতা ও মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উপকারিতা

১. বায়ু বিশুদ্ধ করে

ইনডোর প্ল্যান্ট ফর্মালডিহাইড, বেঞ্জিন এবং ট্রাইক্লোরোইথিলিনের মতো বিষাক্ত রাসায়নিক দূষক শোষণ করে। ঘরের বাতাসের গুণমান ঠিক রাখে ও বাতাস পরিষ্কার রাখে।

২. বায়ুতে আর্দ্রতা বৃদ্ধি করে

ইনডোর প্ল্যান্ট অন্যান্য গাছপালার মত প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় পাতা থেকে জলীয় বাষ্প ছাড়ে, যা শুষ্ক বাতাসে আর্দ্রতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ফলে ঘরের তাপমাত্রা তেমন বৃদ্ধি পায় না।

৩. মানসিক চাপ কমায়

সবুজ রঙ মনে প্রশান্তি আনে। গবেষণায় দেখা গেছে, চারপাশে গাছ থাকলে মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করতে পারে। মনকে শান্ত করে এবং আরামের অনুভূতি নিয়ে আসে। তাই, ইনডোর প্ল্যান্ট আপনার মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে।

৪. বিষন্নতা দূর করে

ঘরে গাছ রাখলে তা শুধু মানসিক চাপই কমে না, সেই সাথে মন অনেক প্রফুল্ল থাকে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, এসব গাছ মন ভালো রাখার পাশাপাশি কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দিবে এবং স্মৃতিশক্তির উন্নতি করবে।

৫. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে ঘরের মধ্যে উদ্ভিদের উপস্থিতি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অবদান রাখতে পারে। এই গাছগুলির দ্বারা নির্গত ফাইটোসাইডগুলি সক্রিয়ভাবে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস গুলোর সাথে লড়াই করে, যার ফলে ঘরের ভেতর অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস পায়।

৬. ভাল ঘুমে সাহায্য করে

ঘরে ভেতর গাছ থাকলে ঘুম ভালো হয়। ল্যাভেন্ডার, জুঁইয়ের মতো গাছ বাড়িতে থাকলে তা প্রাকৃতিক ঘুমের ওষুধের মতো কাজ করে। মানসিক অবসাদ এবং চাপ কমিয়ে ,এনে দিতে পারে প্রশান্তির ঘুম।

গাছগুলি খাবার তৈরি করার সময় অক্সিজেন ছাড়ে এবং কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে, যা ঘুমের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে সাহায্য করে।

৭. ঘর সাজাতে

আপনি যদি ঘরের একঘেয়েমি থেকে মুক্তি পেতে চান তবে ইনডোর প্ল্যান্টই সেরা। কারণ ইনডোর প্ল্যান্ট বিভিন্ন আকার এবং রঙের হয় । তাই ইচ্ছা মতো ঘর সাজানো যায়। 

৮. অর্থ সাশ্রয়

ইনডোর প্ল্যান্টগুলো যে কেবল সুন্দর তা নয় । এগুলোর অনেক উপকারিতা রয়েছে। এই উপকারিতা গুলোকে কাজে লাগিয়ে আপনি অনেক অর্থ সাশ্রয় করতে পারবেন। যেমন: ত্বক ও চুলের যত্নে ঘৃতকুমারী, মশা তাড়ানোর জন্য সিট্রোনেলা, রান্নার জন্য পুদিনা পাতা, এয়ার ফ্রেশনারের জন্য ল্যাভেন্ডার, ইত্যাদি।

কিছু জনপ্রিয় ইনডোর প্লান্টের নাম ও ছবি

১. পিস লিলি

Peace Lily
Peace Lily

পিস লিলি নামটার অর্থে যেমন শান্তি রয়েছে। এটি দেখলেও মনে শান্তি লাগে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, এটি বাতাসের কার্বন ড্রাই অক্সাইড দূর করে থাকে। বায়ু পরিষ্কার করতে ভূমিকা রাখে।

২. স্পাইডার প্ল্যান্ট – Spider plant

সবুজ পাতার কিনারায় সাদা বর্ডারের গাছটির নাম স্পাইডার প্ল্যান্ট। ছোট ছোট টবে করে বারান্দায় ঝুলিয়ে রাখতে পারেন। দেখতে অনেক সুন্দর দেখায় এবং বেশি যত্নেরও প্রয়োজন হয় না। এটি বাতাসে থাকা বিষাক্ত ফর্মালডিহাইড সরিয়ে ফেলে ঘরের বাতাস পরিশুদ্ধ করতে সহায়তা করে।

৩. রাবার প্ল্যান্ট – Rubber fig

রাবার প্ল্যান্ট ফিকাস ইলস্টিকা নামে পরিচিত। এটিও ঘরের বায়ুকে দূষণ মুক্ত রাখে। এই গাছের পাতা বেশ বিষাক্ত, মুখে গেলে ক্ষতি হতে পারে। তাই বাচ্চাদের ও ঘরের পোষা প্রাণীর কাছ থেকে দূরে রাখবেন। 

৪. স্নেইক প্ল্যান্ট – Dracaena trifasciata

স্নেইক প্ল্যান্ট - Dracaena trifasciata

ইনডোর প্ল্যান্টের নাম হচ্ছে আর এ সেখানে স্নেইক প্ল্যান্ট এর নাম থাকবে না এটা হতে পারে না। গ্রাম থেকে শহরে সব জায়গায় এক গাছটি বহুল পরিচিত। এই গাছটিতে পানি কম দিলে তেমন সমস্যা হয় না। তবে বেশি পানি দিলে মারা যেতে পারে। তাই মাটি একেবারে শুষ্ক হয়ে গেলে পানি দেবেন।

৫. পোথোস বা মানিপ্ল্যান্ট

এটি এক ধরনের লতা গাছ। মাটি বা পানি উভয় স্থানে এই গাছ জন্মাতে পারে। এটি একই সাথে ঘরের সৌন্দর্য বর্ধন ও বাতাসে থাকা বিষাক্ত উপাদান দূর করে।

৬. অ্যালোভেরা – Aloe vera

অ্যালোভেরার বাংলা অর্থ হচ্ছে ঘৃতকুমারী। গ্রাম থেকে শহরে সব জায়গায় এর খ্যাতি ক্ষেত্রে ছড়িয়ে রয়েছে। এটি ভেষজ গুনাগুণে সমৃদ্ধ। বর্তমানে এটি ত্বক ও চুলের যত ব্যাপকভাবে ব্যবহার হচ্ছে।

৭. এলিফ্যান্ট ইয়ার প্ল্যান্ট – Elephant Ear Plant

এলিফ্যান্ট ইয়ার প্ল্যান্ট কয়েক ফুট লম্বা হতে পারে। এই গাছটি আকৃতিতে বড় হওয়ার কারণে একটু বেশি জায়গার প্রয়োজন হয়।

জনপ্রিয় ইনডোর প্লান্ট এর নাম 

ইনডোর প্ল্যান্টের যত্ন ও পরিচর্যা

বেশিরভাগ মানুষ ইনডোর প্ল্যান্ট ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য লাগায়। ইনডোর প্ল্যান্টের নিয়মিত যত্ন ও পরিচর্যা করলে ঘরের সৌন্দর্য ও সজীবতা বজায় থাকবে।

ইন্ডোর প্ল্যান্টের যত্ন ও পরিচর্যা বিষয়ক কিছু টিপস নিচে দেওয়া হলো-

  • প্রথমে শুকনো কাপড় দিয়ে গাছের পাতায় জমে থাকা ধুলাবালি আলতোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। এরপর আরেকটি ভেজা কাপড় বা টিস্যু দিয়ে পাতার ধুলাবালি মুছে দিতে হবে।
  • গাছে যেন পর্যাপ্ত বাতাস পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
  • সপ্তাহে অন্তত একদিন জানালার পাশে রোদে রাখার চেষ্টা করতে হবে ।
  • গাছের গোড়ায় মাটিতে পানি দিতে হবে। যেন মাটি নরম থাকে। তবে অতিরিক্ত পানি দিয়ে মাটি কর্দমাক্ত করে দেওয়া যাবে না।
  • নতুন ধরনের গাছ লাগানোর আগে, মাটির প্রস্তুতি জানতে হবে। কারণ প্রতিটি গাছের পুষ্টির চাহিদা আলাদা।
  • টবের নিচে একটি  ছিদ্র করা উচিত যাতে অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যায়। টব থেকে পানি ঘরের মেঝেতে পড়ে নোংরা হতে পারে, তাই ট্রে সহ টব বা প্লাস্টিকের টব ব্যবহার করতে পারেন।
  • গাছের পাতা হলুদ বা শুকনো হলে বুঝতে হবে গাছে পানি দিতে হবে। সেক্ষেত্রে মাটিতে পানি দেওয়ার পাশাপাশি গাছের পাতায় পানি স্প্রে করলে গাছ দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে।

আশা করি আর্টিকেল এর মাধ্যমে ইনডোর  প্ল্যান্ট এর উপকারিতা সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে ও বুঝতে পেরেছেন। তাই আপনার পছন্দমত ইনডোর  প্ল্যান্ট বাছাই করুন এবং ঘরকে সাজিয়ে তুলুন।

Similar Posts

Leave a Reply