এয়ার কুলার কিভাবে কাজ করে ও এয়ার কুলারের সুবিধা অসুবিধা

গ্রীষ্মকালীন সময়ে তীব্র তাপ থেকে বাচতে একটু স্বস্তির জন্য এয়ার কুলার কিনতে চান? তাহলে জেনে নিন এয়ার কুলার এর সুবিধা অসুবিধা। 

এয়ার কুলার এর সুবিধা ও অসুবিধা

প্রিয় পাঠক, গ্রীষ্মকালীন সময়ে তীব্র তাপ থেকে বাচতে একটু স্বস্তির জন্য এয়ার কুলার কিনতে চান? তাহলে জেনে নিন এয়ার কুলার এর সুবিধা অসুবিধা। 

এয়ার কুলার আমাদের দেশের মানুষদের আর্থিক অবস্থা ও আবহাওয়া বিবেচনা খুবই উপকারী একটি ডিভাইস। আমরা অনেকেই এয়ার কুলার সম্পর্কে বিস্তারিত জানিনা।

তাই এয়ার কুলার কি? কিভাবে কাজ করে, এয়ার কুলার এর সুবিধা অসুবিধা ও এয়ার কুলার কেনার আগে বিবেচ্য বিষয় গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যই আজকের আলোচনা। 

এয়ার কুলার কি?

এয়ার কুলার হচ্ছে বদ্ধ প্রকোষ্টের ভিতরে থাকা ঠান্ডা বায়ু প্রবাহ কারী এক ধরণের ফ্যান। এটি একটি কৃত্রিম ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস। ব্যবহারের জন্য এর ভিতরে পানি বা বরফ দিতে হয় এবং সেই পানি বা বরফের ঠান্ডাভাবের মতো সম পরিমান ঠান্ডা বায়ু এয়ার কুলার থেকে বেড়িয়ে আসে। প্রচন্ড গরমে স্বল্প খরচে এয়ার কন্ডিশনারের মতো উপকার পেতে এয়ার কুলার ব্যবহার করা যায়।

এয়ার কুলার কিভাবে কাজ করে

এয়ার কুলারের ৩টি মূল অংশ আছে, পানি বা বরফের চেম্বার, পানি ধরে রাখার জালি, এবং একটি পাখা। চেম্বারে ঠান্ডা পানি বা বরফ দেয়ার পর, পাখার পিছনে থাকা জালিটি পানি শোষন করে ভিজে যায়। পাখাটি জালির ভেতর দিয়ে বাতাস টেনে বাহিরে প্রবাহিত করে। ফলে, উঞ্চ বাতাস শীতল পানিতে ভেজা জালির ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় শীতল হয়ে প্রবাহিত হয়।

এয়ার কুলার কিভাবে কাজ করে

এয়ার কুলারের সম্পূর্ন প্রক্রিয়াটি হলো-

  • প্রথমে বৈদুতিক সংযোগ প্রদান করতে হবে;
  • এর ভিতরে থাকা ট্যাংকের মধ্যে ঠান্ডা পানি বা হালকা গলিত বরফ দিতে হবে;
  • এবার কুলারে পাওয়ার দিলে ভিতরে থাকা ফ্যান চলতে থাকে;
  • ট্যাংকে দেওয়া পানিকে ফ্যান টেনে নেয় এবং বাষ্পীভূত করে বাহিরের দিকে ঠেলে দেয়;
  • কুলারের শেষ প্রান্তে থাকা জালির মতো আবরন ঠান্ডা পানির আর্দ্রতা ধরে রাখে। শীতল জালির ভেতর দিয়ে উষ্ণ বাতাস প্রবাহিত হয়ে বাহিরে শীতল বাতাস প্রবাহিত হয়।
  • পাওয়ার বাটনের সাহায্যে এয়ার কুলারের স্পিড কম-বেশি করা যায়। 

সহজেই এয়ারকুলারে পানি দিয়ে পাওয়া দিলেই নিজে থেকেই এর প্রক্রিয়া চলমান হয়। এবার ব্যবহারের ক্ষেত্রে এয়ার কুলার এর সুবিধা অসুবিধা জেনে নেওয়া যাক-

এয়ার কুলারের সুবিধা

এয়ার কুলারের সুবিধা হচ্ছে তীব্র গরমে ঠান্ডা বাতাস দিয়ে ঘর শীতল করতে পারে। এটি এয়ার কন্ডিশানার থেকে অনেক কম মূল্যের তাই অল্প আয়ের মানুষ এটি ব্যবহার করে গরমে স্বস্তি পেতে পারে। এটি বসাতে কোন ঝামেলা নেই এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী। হালকা হওয়ায় এটি সহজেই বহনযোগ্য।

এছাড়া এয়ার কুলার ব্যবহারে নিম্মোক্ত সুবিধাগুলো পাওয়া যায়, যেমন:

  1. তীব্র গরমে স্বস্তির জন্য এয়ার কুলার খুব সুন্দর উপায়।
  2. এয়ার কন্ডিশনার থেকে তূলনামূলক অনেক কম মূল্যেই এয়ার কুলার পাওয়া যায়। তাই কম আয়ের মানুষজনও এটি ব্যবহার করতে পারে।
  3. কোন প্রকার ইন্সটলেশন ঝামেলা পোহাতে হয় না।
  4. এয়ার কুলার তুলনামূলকভাবে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী। এয়ার কন্ডিশনার এর তূলনায় ৭০% – ৮০% কম বিদ্যুৎ লাগে।
  5. ঘরের যেকোন প্রান্তে অল্প জায়গা হলেই ব্যবহার করা যায়।
  6. সহজেই পরিবহনযোগ্য।
  7. যেকোন মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য এয়ার কুলার সহনশীল।
  8. এটি একটি পরিবেশ বান্ধন ইলেকট্রনিক ডিভাইস।

এয়ার কুলারের অসুবিধা

বেশ কিছু সুবিধার পাশাপাশি এয়ার কুলার এর কয়েকটি অসুবিধাও রয়েছে। এয়ার কুলারের অসুবিধা হলো:

  1. ছোট পরিসরে ব্যবহার করা যায়।
  2. এর বায়ু ঠান্ডাকরন প্রক্রিয়ায় আশেপাশের পরিবেশ ঠান্ডা করতে অনেক সময় লাগে।
  3. আর্দ্রতা বেশি হলে এর কাজে ব্যাঘাত ঘটে।
  4. বার বার ভিতরের ট্যাংকের পানি পরিবর্তন করতে হয়।
  5. এয়ার কন্ডিশনারের তূলনায় ঠান্ডা কম হয়।

উপরোক্ত ভাবে এয়ার কুলার এর সুবিধা অসুবিধা থাকলেও, কম খরচে ঠান্ডা পরিবেশ পেতে এয়ার কুলারের সুবিধাই বেশি।

এয়ার কুলার কেনার আগে বিবেচ্য বিষয়

আপনি নিজের জন্য বা পরিবারের সকলের জন্য এয়ার কুলার কিনতে চাইলে, আপনার কোন কোয়ালিটির, কতটুকু পাওয়ারের মধ্যে নিতে চান তা বিবেচনা করতে হয়। তাই এয়ার কুলার এর সুবিধা অসুবিধা অনুযায়ী নিম্নোক্ত বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হয়-

  • কুলারের ধরন– আপনি পার্সোনাল কুলার নিবেন নাকি ডেসার্ট কুলার নিবেন তা নির্বাচন। পার্সোনাল কুলার ১০০-৩০০ স্কোয়ার ফিট এবং ডেসার্ট কুলার ৩০০ স্কোয়ার ফিট এর বেশি সার্ভিস দিতে পারে।
  • ওয়াটার ট্যাংক– প্রয়োজনীয়তার কথা চিন্তা করে ১৫-২৫ লিটার পানি ধারন ক্ষমতার কুলার নিতে পারেন।
  • নয়েজ লেভেল- কুলার কেনার আগে চাকিয়ে দেখুন এটি চালানো হলে এবং স্পিড বাড়ালে সাইন্ড বেশি হচ্ছে কিনা। কম সাউন্ড হয় এমন কুলার বাছাই করুন
  • বিদ্যুৎ সাশ্রয়– কোন কুলার ইনভারটার টেকনোলোজি যুক্ত তা দেখে কিনুন। এতে অনেক বেশি বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়।
  • কুলিং প্যাড- কুলার ক্রয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এর কুলিং প্যাড। কুলিং প্যাড বিবেচনায় হানিকম্ব প্যাডস বেশি সুবিধা দেয়, তাই এটি দেখে নিতে পারেন।
  • অন্যান্য সুবিধা- আধুনিকতার সাথে সাথে কুলারেও রিমোট কন্ট্রোল, ডাস্ট ফিল্টার, বরফের আইস ট্যাংক, মশা নিরোধক ফিচার থাকে। এগুলোর সুবিধা দেখে নিন।

উপরোক্ত বিষয়গুলো এবং এয়ার কুলার এর সুবিধা অসুবিধা বিবেচনা করে আপনার পছন্দের কুলারটি ক্রয় করতে পারেন।

FAQ’s

কুলারের কোয়ালিটি, সাইজ, পাওয়ার, ব্রান্ড ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে ৫ হাজার থেকে শুরু করে ৫০,০০০ বা তারও বেশি দামের কুলার রয়েছে। একটি মিনি এয়ার কুলার মাত্র ১২০০ টাকাতেও পাওয়া যায়। পার্সোনাল রুম কুলার ৫-১৫ হাজার পর্যন্ত। ডেসার্ট কুলার একটু বেশি দামি হয়।

এয়ার কুলার একটি পরিবেশবান্ধন ইলেকট্রনিক ডিভাইস। পানিকে বাষ্পীভূত করে তা থেকে ঠান্ডা বাতাস প্রবাহিত করে। তাই এর তেমন কোন ক্ষতিকর দিক নেই। হাঁপানি রোগে আক্রান্তদের জন্যও এয়ার কুলার সহনশীল বলে প্রমানিত। 

রুম কুলার ও এয়ার কুলারের শক্তির পার্থক্য রয়েছে। রুম কুলার ১০০ থেকে ৩০০ স্কয়ার ফিট পর্যন্ত আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করে এবং সাধারন তাপমাত্রায় এটি ব্যবহার উপযোগী।

শেষকথা

আসন্ন গ্রীষ্মকালীন সময়ে প্রচন্ড গরমে নিজেকে একটু স্বস্তির যোগান দিতে কম খরচেই ব্যবহার করতে পারেন এয়ার কুলার। এয়ার কুলার এর সুবিধা অসুবিধা বিবেচনায় ও স্বাস্থ্য সচেতনতায় এটি ব্যবহারযোগ্যও।

আজকের আলোচনার মূল বিষয় ছিলো – এয়ার কুলার এর সুবিধা অসুবিধা। আশাকরি সম্পুর্ন ধারনা পেয়েছেন এয়ার কুলার সম্পর্কে। প্রযুক্তি বিষয়ক এরকম উপকারী তথ্য জানতে ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইট, ধন্যবাদ।

Similar Posts

Leave a Reply